আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু, চুপ মসিক কর্তৃপক্ষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৯:৩৮ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ ভর্তি হচ্ছে, আবার অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। মাঝেমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে হাসপাতালে পড়ছে বিষাদের ছায়া। কিন্তু ডেঙ্গু মোকাবিলায় কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়লে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমসিম খেতে হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১৪ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৫ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ১২, নারী দুই ও শিশু একজন।

সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তামান্না আক্তার নামের এক কিশোরী। তিনি নেত্রকোনা মদন উপজেলার গৌবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কদমশ্রী গ্রামের মেরাজ আলীর মেয়ে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছে, যারা ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য রোগের জটিলতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আবার অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। কিন্তু চিকিৎসার আগেই মারা যান। আক্রান্তদের অধিকাংশই ময়মনসিংহ নগরীর বাইরের। আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তারা হাসপাতালে আসছেন।

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু, চুপ মসিক কর্তৃপক্ষ

হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন মহিউদ্দিন খান বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। হাসপাতালে যারা এসে ভর্তি হচ্ছে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতার বিকল্প নেই।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চালু করা হয়েছে ৬০ শয্যার আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। ডেঙ্গু রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা প্রস্তুত রয়েছেন।

এদিকে নগরীতে মশার উপদ্রব বাড়লেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী। তারা বলছেন, নগরীতে গুন গুন করে দিন-রাত কামড়াচ্ছে মশা। রাতে তো বটেই- অনেক এলাকায় দিনের বেলাতেও ঘুমোতে চাইলে মশারী টাঙাতে হচ্ছে।

নগরীর ভাটিকাশর এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, দিন-রাত মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। মশার উপদ্রব বাড়ার কারণে ছেলে-মেয়েরা বাসায় ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পাড়ছে না। সিটি কর্তৃপক্ষ এসব জেনেও চাপ আছে।

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু, চুপ মসিক কর্তৃপক্ষ

নগরীর গোলাপজান এলাকার আরেক বাসিন্দা সাইদুল মিয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু আমাদের দিকে সুনজর দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে মশার ওষুধ ছিটানো প্রয়োজন।

ওষুধের সংকটে ময়মনসিংহ নগরীতে মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচ কে দেবনাথ বলেন, নগরীতে মশার উপদ্রব বাড়ছে। নিয়মিত কার্যক্রম চালানোর মতো ওষুধ থাকলেও ক্র্যাশ প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই, তা কেনার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সিটির একজনও মারা যাননি। তবে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। খুব দ্রুত সব এলাকায় মশার ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধন করা হবে।

এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।