কক্সবাজার
হত্যা মামলার আসামিকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাবার পথে তুলে নিয়ে ধলা মিয়া প্রকাশ দানু মিয়া (৪১) নামে হত্যা মামলার এক আসামিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। একই ঘটনায় আরেকজনকে আহতাবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ধলা মিয়া মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মাহারা পাড়ার মৃত কলমদারের ছেলে। আহত মো. মুবিনুল ইসলাম (৩০) চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নের ছড়াপাড়ার ছাবের আহমদের ছেলে। ধলা মিয়া ও মুবিনুল ইসলাম দুজন একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
স্থানীয়রা জানায়, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার আসহাবুল করিম জিহাদকে চকরিয়ার কোনাখালী এলাকায় ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। জিহাদ কক্সবাজার সিটি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। মোবাইল সংক্রান্ত বিষয়ে এ হত্যাকাণ্ড হয়। এ হত্যার ঘটনায় জিহাদের বাবা মকছুদুল করিম ১২ জনের নাম উল্লেখ করে চকরিয়া থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে আসামিদের তালিকায় ৬ নম্বরে ধলা মিয়া ও ৯ নম্বরে মুবিনুল ইসলামের নাম রয়েছে।
ধলা মিয়ার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানায়, জিহাদ হত্যা মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলাম। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোনাখালীর ছড়াপাড়া থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাচ্ছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে একই মামলায় জামিনে থাকা মোবারক আলী নামের অপর এক আসামিও ছিলেন। সবাই ইদমনি লাল ব্রিজের পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছালে ১৫-২০ জনের দুর্বৃত্তদল তাদের গতিরোধ ও একযোগে দানু মিয়া, মুবিন ও মোবারক আলীকে প্রহার শুরু করেন।
এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা ধলা মিয়া ও মুবিনকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে যান। পরে পেকুয়ার সিকদারপাড়া মসজিদের পাশে নুরুল আজিমের পরিত্যক্ত দোকানে বেঁধে দুজনকে দিনভর পেটানো হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আহত ধলা মিয়া ও মুবিনুল ইসলামকে নিয়ে কোনাখালীর ছড়াপাড়া এলাকায় পৌঁছে। সেখান থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্সে ধলা মিয়াকে নিয়ে চমেক হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন পরিবারের সদস্যরা। পথে রাত ১০টার দিকে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় ধলা মিয়া মারা যান। অপর গাড়ি করে মুবিনকে তার স্বজনেরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।
ধলা মিয়ার জামাতা মোহাম্মদ রমিজ বলেন, নির্মমভাবে আমার শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুরো শরীরে জখমের চিহ্ন। সিকদারপাড়া মসজিদের পাশে একটি দোকানে সারাদিন মারধর করলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে যাননি। যেভাবে হোক তিনি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন- তার ফয়সালা তো আদালতে হতো। দোষী প্রমাণের আগে এভাবে তুলে নিয়ে দিনভর পিটিয়ে হত্যা করতে হলো? তিনি তো আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিলেন। আমরা এ অমানবিক হত্যার বিচার চাই।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, রাত ১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে দানু মিয়ার মরদেহ থানায় আনেন স্বজনরা। যেহেতু হত্যার বিষয়, তাই অ্যাম্বুলেন্সের চালককে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সকালে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, সিকদারপাড়ায় সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে এখনো কেউ আমাদের কাছে আসেনি। লোকমুখে শুনেছি দানু মিয়া ও অপর একজনকে তুলে নিয়ে প্রহার করা হয়েছে। আমাদের কাছে এলে যথাযথ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএইচ/এমএস