অর্থ-জনবল সংকটে পাবনা মানসিক হাসপাতাল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৯:১৯ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মানসিক রোগের চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র পাবনা মানসিক হাসপাতাল। মানুষের প্রত্যাশা, এখানে মিলবে মানসিক রোগের সর্বোচ্চমানের সেবা। সুস্থ হয়ে উঠবেন রোগীরা। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও জনবল সংকটে দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশকেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতাল এখন নিজেই যেন রোগী!

প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এ সংকট ঘুচলে রোগীদের আধুনিকমানের সেবা দেওয়া সম্ভব বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই দ্রুত এসব সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারের মঞ্জুরিকৃত ৩১টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১২ জন। পদ শূন্য রয়েছে ১৯টি। প্রথম শ্রেণির সাতজন কর্মকর্তার স্থলে রয়েছে তিনজন। দ্বিতীয় শ্রেণির পদ সংখ্যা ৩১৬ জন। বিপরীতে কর্মরত ২৯৬ জন। একইভাবে তৃতীয় শ্রেণির ১১৯টির বিপরীতে ৪২টি ও চতুর্থ শ্রেণির ১৭০টি পদের মধ্যে ১০৯টি পদ শূন্য রয়েছে।

অর্থ-জনবল সংকটে পাবনা মানসিক হাসপাতাল

মোট ৬৪৩টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৪৪৯ জন। সবমিলিয়ে পদ শূন্য ১৯৪টি। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট, ডেন্টাল সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও শূন্য।

১৯৫৭ সালে ১১১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে হাসপাতালটি মানসিক রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ৬০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এখন ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রশাসনিক অবকাঠামো পরিচালনার জন্য রয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আগের নিয়মেই দেওয়া হয় ব্যবস্থাপত্র। এখনো জরাজীর্ণ ভবনে চলে বহির্বিভাগে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা।

সরেজমিন দেখা যায়, ৫০০ শয্যার মানসিক হাসপাতালে প্রধান ফটকের প্রবেশ মুখে সড়কের বেহাল দশা। ভর্তি হওয়া আবাসিক রোগীদের আবাসস্থলও বেশ পুরোনো। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রাস্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয় নানান সমস্যায়।

পাবনার ঈশ্বরদী মুলাডুলি থেকে আসা মানসিক রোগীর স্বজন মোজাম ও রংপুরের অনিক বলেন, বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে তারা ঈশ্বরদী ও রংপুর থেকে ভোরে এসেছেন। তারা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসার মান ভালো হলেও বহিবির্ভাগে মাত্র দুজন ডাক্তার ও অন্যান্য পদে জনবল সংকট থাকায় সিরিয়াল নিয়ে রোগী দেখাতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। এতে দূর থেকে আসা রোগীর স্বজনরা রোগী হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়ি ফিরতে অনেক সমস্যায় পড়েন।

কথা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা রোগীর স্বজন মো. গফুরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, মানসিক সমস্যার জন্য ছোট ভাইকে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়েছেন। ডাক্তার হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ডাক্তার দেখাতে দেরি হওয়ায় এবং হাসপাতালে স্বজনদের থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

অর্থ-জনবল সংকটে পাবনা মানসিক হাসপাতাল

এ বিষয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম শফিউল আযম বলেন, যদি রোগীদের কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে চাই, তাহলে আমাদের আরও বেশি জনবল প্রয়োজন। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী যারা আমাদের কাজে সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, বহির্বিভাগের সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো সংস্কার প্রয়োজন। এসব সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন এই চিকিৎসক।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর হাসপাতালে সবসময় ভর্তি থাকে ৪০০-৪৫০ রোগী। অথচ হাসপাতালে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র চারজন।

তিনি বলেন, হাসপাতালটি উন্নত করার জন্য এর পাশেই আরও একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণের মহাপরিকল্পনা করেছে সরকার। সেটির নকশা ও অনুমোদন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সব ঠিক থাকলে খুব দ্রুততম সময়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।