ইজারা না দিয়ে হরিলুট পশুরহাটের খাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুরহাট পরানপুর হাট। হাটটি গত দুই বছর সরকারিভাবে ইজারা হয়নি। সরকারিভাবে ভূমি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে চলছে খাস আদায়ের কার্যক্রম। তবে বাস্তবতা এর উল্টো।

ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার দাঁড়িয়ে থেকে খাস আদায়ের কথা থাকলেও, আদায় করছেন পুরোনো ইজারাদার ও তার লোকজন নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। খাস আদায়ের নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বেশিরভাগই পকেটে ভরছে ওই ইজারাদার সিন্ডিকেট। এতে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বুলবুল, জুন্নু মিনা, মো. আলী মোল্যা ও তাদের লোকজন খাস কালেকশন করছেন। সেখানে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও তার লোকজন কাউকে দেখা যায়নি। তবে হাটের মধ্যে একটি চায়ের দোকানে ভূমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি বুধবার হাট বসে। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ১০০০ পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়। প্রতি পশুর (গরু) ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকা হারে খাস আদায় করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতি হাটে তিন লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়।

অভিযোগ রয়েছে, গত ১৪৩০ ও ১৪৩১ বাংলা সনে হাটটি ইজারা না নিয়েই কৌশলে খাস আদায় করছেন সাবেক ইজারাদার। সিন্ডিকেটটি দরপত্র অনুযায়ী ইজারা না নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে ‘খাস আদায়ের’ নামে সরকারের রাজস্ব খাতের টাকা লুটপাট করছে। এছাড়া আদায়কৃত টাকার একটি অংশ প্রতি হাটে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য, স্থানীয় মোড়ল সিন্ডিকেটদের পকেটে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও ভূমি কর্মকর্তার ভাষ্য দুই ধরনের।

ইজারা না দিয়ে হরিলুট পশুরহাটের খাস

হাটে খাস আদায় করা সাবেক ইজারাদার বুলবুল মিয়া বলেন, ‘চুক্তির মাধ্যমে আমরা খাস কালেকশন করছি। ইউএনওর কাছ থেকে হাট প্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাট নিয়েছি। প্রতি হাটে তহশিলদারের মাধ্যমে এ টাকা ইউএনও অফিসে জমা দিই।’

তার ভাষ্যমতে, এ পর্যন্ত ৩৩টি হাট পেয়েছেন। যা থেকে এ পর্যন্ত ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইউএনও অফিস থেকে তথ্য না দেওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ১৪২৯ সালে হাটটি ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছিল।

এদিকে খাস আদায়ের দায়িত্বে থাকা তারাইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সপ্তাহে হাট থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৩২৫ টাকা খাস আদায় হয়েছে। শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে বাকি ১ লাখ ৭০০০ টাকা ইউএনও অফিসে জমা দিয়ে এসেছি। তবে কতগুলো পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

খাস আদায় কমিটির সভাপতি ইউএনও ফারজানা জান্নাতের কাছে খাস আদায়ের তথ্য চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি একটি হাটে খাস আদায় হয়। তবে আমি নতুন এসেছি, একটু জেনে-বুঝে নিই। তারপর তথ্য দেবো।’

আশিক জামান অভি/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।