বিপাকে শ্রমিকরা
দর্শনা রেলবন্দরে ৯ মাস ধরে আলু-পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৯ মাস ধরে আলু-পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ আমদানি স্বাভাবিক হবে সে ব্যাপারেও রয়েছে অনিশ্চয়তা। দর্শনা রেলবন্দর কর্তৃপক্ষ বা আমদানিকারকরাও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক জেলা থেকে ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজের একটি চালান আসে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনে। বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবি) কর্তৃপক্ষ সেসময় ভারতীয় রেলওয়ের ৪২টি ওয়াগন ভর্তি পেঁয়াজের চালান নিয়ে আসে, যা সেসময় দর্শনায় পৌঁছানোর পর পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে সিরাজগঞ্জের পথে রওনা হয়। এরপর থেকে বন্ধ আছে দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি।
এছাড়া একই মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বশেষ আলু আমদানি হয় এ স্টেশন দিয়ে। এছাড়াও গত তিন মাস ধরে পাথর আমদানিও বন্ধ। বর্তমানে শুধু সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ আর ফিড তৈরির কাঁচামাল খৈল আমদানি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক জানান, আলু-পেঁয়াজ দীর্ঘদিন আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে করে আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বো। সরকারের উচিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া।
এদিকে দর্শনা রেলবন্দরে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন কম প্রবেশ করায় বন্দরের শ্রমিক, সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী ও সারাদেশ থেকে আসা ট্রাকচালক-হেলপাররা অলস সময় পার করছেন। আলু-পেঁয়াজসহ অন্যান্য মালামাল আমদানি না হওয়ায় কমেছে রাজস্ব।
জানা যায়, ভারত থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে মালবাহী ওয়াগনে করে পণ্য আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি ও খালাসের পর সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে চাহিদামতো সরবরাহ করা হয়। তবে নানা কারণে আমদানি কমেছে এ বন্দরে।
তবে ব্যবসায়ীদের মতে, ব্যাংক চাহিদামতো এলসি অনুমোদন না করায় পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। অল্প কিছু পণ্য আমদানি হলেও রেল ইয়ার্ডে নেই আগের মতো সেই কর্মব্যস্ততা। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় অনেক শ্রমিক ও ট্রাকচালক। আর আমদানিকারকরাও আছেন বিপাকে।
রেলবন্দরে থাকা কয়েকজন শ্রমিক ও ট্রাকচালক তাদের নাম না বলে জানান, কাজ না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে সংসার খরচে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, আগের সেই ব্যস্ততা নেই। শুয়ে-বসে দিন যায়। সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হোক। আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিকুর রহমান আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এরআগে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মির্জা কামরুল হক জানান, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পণ্য আমদানি কমেছে। এতে রাজস্ব আদায়ও কমেছে। এখনো পর্যন্ত পণ্য আমদানি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি।
দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হয় ধান, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, খৈল, পাথরসহ নানা ধরনের পণ্য। আমদানিকৃত এসব পণ্যের একটা বড় অংশ আসে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঢাকার সঙ্গে অল্প দূরত্ব ও স্বল্প ব্যয়ে আমদানি-রপ্তানির জন্য দর্শনা রেলবন্দর ব্যবসায়ীদের পছন্দের শীর্ষে থাকায় প্রতি বছরই বাড়তো পণ্য আমদানির পরিমাণ। কিন্তু গত কয়েক মাস তা বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়ছে এ জেলার অর্থনীতিও।
হুসাইন মালিক/এফএ/এএসএম