আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ

ঝুঁকিতে চলছে ফেরি, ড্রেজিংয়েও মিলছে না সমাধান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার কাজীরহাট নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রাত-দিন ড্রেজিং করেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। ফলে কয়েকদিন পর পর বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। এতে কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে সরকারের। বেড়েছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নদীতে পানি কমে ডুবোচর সৃষ্টি হয়ে নৌ চ্যানেল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নাব্যতার অভাবে ঘাট কর্তৃপক্ষ গত নভেম্বর মাসে বাধ্য হয়ে তিনবার সাময়িকভাবে ফেরি বন্ধ রাখে। এখন কোনো রকমে ফেলি চললেও, পানি কমায় নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চ্যানেলটি ক্রমেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে যে কোনো সময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ফেরি চলাচল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র জানায়, প্রায় এক মাস ধরে আরিচা ঘাটের অদূরে যমুনা নদীর ডুবোচরে ফেরি আটকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায়ও ঝুঁকি নিয়ে ফেরি সচল রাখা হয়। ছয়টি খনন যন্ত্র দিয়ে একযোগে খনন করেও নাব্যতা ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ বলেন, আরিচা-কাজীরহাট চ্যানেলে পলি পড়া অব্যাহত রয়েছে। বিগত চার মাসের বেশি সময় ধরে ড্রেজিং হলেও সুফল মিলছে না। যে কোনো সময় আবার ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, এই নৌপথে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে পাঁচটি ফেরি আছে। এসব ফেরি দিয়ে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০টি যানবাহন পারাপার হয়। এর অধিকাংশই পণ্যবাহী। এছাড়া অল্পসংখ্যক যাত্রীবাহী যানবাহনও পারাপার হয়। বার বার নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়া ও সময় বেশি লাগায় পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে ও পরিবহনেও ব্যয় বাড়ছে।

এলাকাবাসী ও নৌপথ ব্যবহারকারীরা জানান, ফারাক্কা এবং গজলডোবা ব্যারেজের বিরূপ প্রভাবে প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা-যমুনার আরিচা-কাজীরহাট-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ি নৌ রুটে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার ও অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণেই এ দুরাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে নৌযান চালকরা মনে করছেন। চার মাসের বেশি সময় ধরে ছয়টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের পরও কি কারণে নৌপথ সচল থাকছে না এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

জানা গেছে, আরিচা-কাজীরহাট নৌরুট সচল রাখতে ২৮ জুলাই থেকে চার মাসের বেশি সময় ধরে পদ্মা ও যমুনা নদীতে বিআইডাব্লিউটিসির ড্রেজিং ইউনিটের নিজস্ব ৬টি ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত পলি অপসারণের কাজ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহ একসঙ্গে ধারণ করে যমুনা নদী প্রবাহমান। উজানে পানি নিয়ন্ত্রণ করায় তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানি প্রবাহ কমে গেছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতে। ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে পদ্মায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এর ফলে পদ্মা ও যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ পাটোয়ারী বলেন, বিআইডাব্লিউএ’র যে আটটি ড্রেজার রয়েছে তা ঠিক মতো কাজ করছে না। যেগুলো করছে তাও আবার অপরিকল্পিত। ড্রেজিং পলি পাইপের সাহায্যে উজানে ফেলছে সেই পলি স্রোতের টানে আবারো ভাটিতে এসে জমা হচ্ছে। এভাবে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণেই নাব্য সঙ্কট নিরসন হচ্ছে না। আসলে, এখানে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার।

বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, আমাদের ড্রেজিং সঠিকভাবেই হচ্ছে। পুরাতন চ্যানেলের পাশে আরেকটি নতুন চ্যানেল খননের কাজ প্রায় শেষের পথে। গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পদ্মা-যমুনায় প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পলিমাটি খনন করা হয়েছে। নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে মাটি কাটার পর উজান থেকে বালু এসে আবার ভরাট হয়ে যায়। অস্বাভাবিক মাত্রায় বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় কারণেই নৌপথের নাব্যতা ঠিক রাখা যাচ্ছে না।

আলমগীর হোসাইন/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।