শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দিলেন প্রধান শিক্ষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জেএন (যোগেন্দ্রনাথ) পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই বছর ধরে একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেনএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ তলার শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় জানালা দিয়ে দেখা যায় ব্ল্যাকবোর্ডের জায়গায় দিশা স্বেচ্ছাসেবী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থা ও সার্বিক সহযোগিতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যানার লাগানো। টেবিলের ওপর বেশকিছু ফাইল রাখা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান মো. মখছেদুর রহমান শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়ে আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন। তবে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কোনোভাবেই মুখ খুলতে রাজি হননি।

অপরদিকে, প্রধান শিক্ষকের নিকট শ্রেণিকক্ষে এনজিওর ব্যানার ও টেবিলে ফাইল রাখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কোনো সদুত্তর দেননি। এসময় ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে গেলে বাধা দেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, দীর্ঘদিন ধরে এনজিওর লোকজনকে চতুর্থ তলায় উঠে মিটিং করতে দেখা যায়। এটা বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় বলে তাদের জানা নেই। শ্রেণিকক্ষ এনজিওর কাছে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি তাদের জানা নেই বলে উল্লেখ করেন।

শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দিলেন প্রধান শিক্ষক

দিশা স্বেচ্ছাসেবী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণ সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, গত বছর শ্রেণিকক্ষে তিনদিন প্রশিক্ষণ হয়েছিল। সেজন্য বিকাশের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে দুই হাজার ৪৭৯ টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। চলতি বছর তাদের ১৪ দিন প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা ওই বিদ্যালয়ে। তার মধ্যে গত ২৩ ও ২৪ নভেম্বর দুদিন প্রশিক্ষণের পর প্রধান শিক্ষক তাকে জানান, ঝামেলা হচ্ছে। আপাতত প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখুন। সেজন্য প্রশিক্ষণ বন্ধ আছে। তবে ভাড়ার টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। তার ভাষ্য, এবছর ১৪ দিনে অন্তত ১০-১২ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে প্রধান শিক্ষককে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মকছেদ আলী বলেন, ২০০৯ সালে তিনি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই ছুটির দিন বা ছুটির পরে শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন এনজিও ও সংগঠনের আয়োজনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে তিনি কোনো ভাড়া নেন না বলে দাবি করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজ ক্ষমতা বলে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি বিদ্যালয়টি ব্যবহার করতে দেন বিভিন্ন এনজিওকে। তার ভাষ্য, মাঝে মধ্যে তিনিও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তখন এনজিও তাকে কিছু অনারিয়াম দেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাজমুল হক জানান, কুমারখালীতে সদ্য যোগদান করেছি। যে কারণে বিষয়টি জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম মিকাইল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আল-মামুন সাগর/এএইচ/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।