আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুমূর্ষু দশা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। নামে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও চলছে খুঁড়িয়ে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার রোগী এলেও তারা তেমন কোনো সেবা পান না। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রোগীদের। চরম অব্যবস্থাপনা আর চিকিৎসকদের সেবাদানে অনীহার কারণে হাসপাতালটি এখন সাধারণ মানুষের কাছে ভোগান্তির আরেক নাম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত হাসপাতালটিতে তেমন কোনো সেবা মিলছে না। চিকিৎসক আছেন মাত্র চারজন। যন্ত্রপাতির বেশিরভাগই অচল। এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে বিকল। নেই কোনো টেকনিশিয়ান। হাসপাতালের ওষুধ সংকটও প্রকট। ফলে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা পড়ছেন চরম বিড়ম্বনায়। বাধ্য হয়ে অনেকে প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা জেলা শহর ফরিদপুরে ছুটে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এমএসআর অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় প্রতিষ্ঠানে ওষুধের টেন্ডারসহ অন্য অর্থনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ওষুধ সংকটের কারণে অনেক রোগী বিনামূল্যের ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিকার চেয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)।

আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মুমূর্ষু দশা

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চরডাঙ্গা থেকে মাবিয়া বেগম এসেছেন বুকের ব্যথা নিয়ে। ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন। ছোট একটি স্লিপ ধরিয়ে চিকিৎসক বলেছেন হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে নিতে। কিন্তু কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন কোনো ওষুধ নেই। বাধ্য হয়ে বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করতে হয়েছে মাবিয়া বেগমের।

দিনমজুর করিম ব্যাপারী এসেছেন হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে, ডাক্তার দেখিয়ে তিনিও সরকারি কোনো ওষুধ পাননি। বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করেছেন। প্রতিদিন এরকম শত শত রোগী সরকারি ওষুধের আশায় আসলেও সামান্য কিছু ওষুধ ছাড়া সকল ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালের অফিস সহকারী ইউনুচ মিয়ার চার ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। তার বেতনের টাকায় চলে সংসার। দুই মাসের বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় আমারা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না।

অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. শহিদুল ইসলামের তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। দুই মেয়ে হাইস্কুলে পড়ালেখা করে। তিনি বলেন, দুই মাসের বেতন ভাতা না পেয়ে মেয়েদের প্রাইভেটের বেতন দিতে পারছি না। ডিসেম্বর মাসে সবার ফাইনাল পরীক্ষা, যদি মাস্টারের মাসিক বেতন না দিতে পারি তাহলে বড় মুসকিলে পড়ে যাবো। এদিকে বাজারের দোকানে বাকির খাতা লম্বা হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাবো। আমরা ছোট কর্মচারী, এর দ্রুত সমাধান চাই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবিদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক আছেন অনেক কম। স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় দুই মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত।

তিনি আরও বলেন, ওষুধের ভান্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে। সেখানেও টেন্ডার দেওয়া যাচ্ছে না। এর প্রতিকার চেয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক সংকট নিরসনের আবেদনও করা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন সাজেদা বেগম পলিন বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট, বেতন-ভাতা, ওষুধ না থাকার বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। বারবার নতুন করে চিকিৎসক চাওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ডিজি অফিস থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গায় পাঠালেও অনেকেই আসতে অসম্মতি জানিয়েছেন। সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই।

এন কে বি নয়ন/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।