শীত না পড়তেই মাদারীপুরের অলিগলিতে পিঠার পসরা
নানা কারণে এখন আর আগের মতো ঘরে ঘরে শীতের পিঠা তৈরি হয় না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও রাস্তার মোড়ে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের শীতের পিঠা। একটি চুলা থেকে কেউ কেউ আটটি চুলায় একসঙ্গে পিঠা তৈরি করছেন। সঙ্গে থাকছে নানা ধরনের ভর্তা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ, শকুনি লেকপাড়, ২নং শকুনি, কলেজের পেছনে, হাসপাতালের মোড়, থানার মোড়, ইটেরপুল, পুরানবাজার, রেন্ডিতলা, করাচি রোড, চৌরাস্তা, পানিছত্র, কাজীর মোড়, পুরাতন ফেরিঘাট, পাকা মসজিদ রোড, জেলখানার কোণা, সৈয়দারবালী, শকুনি এলাকা, পাকদী, খাগদী, বাদাম তলা, মিলন সিনেমা হল সংলগ্ন, লঞ্চঘাট, আমিরাবাদ, মাস্টার কলোনী, সরদার কলোনী, সবুজবাগ, রাস্তি, টিবি ক্লিনিক রোড, নদীর পাড়সহ প্রায় দেড়শতাধিক স্থানে ভ্রাম্যমাণ চুলা বসিয়ে নানা ধরনের পিঠা বিক্রি হচ্ছে।
অনেকেই ভ্যানগাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে আবার নির্দিষ্ট জায়গায় থামিয়েও পিঠা বিক্রি করছেন। সুবিধামতো চুলা বসিয়ে পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, চাপড়ি, পাকন, মুঠি পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, ছিট রুটিসহ নানা ধরনের পিঠা বানানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চিতই আর ভাপা পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেওয়া হয় শুঁটকি, ধনেপাতা, সরিষা, বাদাম, কালোজিরা, মরিচসহ নানা ধরনের ভর্তা। আর ভাপা পিঠা তৈরি করা হয় মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে।
এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে সন্ধ্যা হলেই বাড়তে থাকে ক্রেতা। রাত ১১ পর্যন্ত চলে এই বেচা-কেনা। শীত মৌসুমে এক শ্রেণির মানুষ অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় পিঠা বিক্রির টাকা দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রতি পিস চিতই পিঠা ১০ টাকা, ভাপা পিঠা ১৫ টাকা করে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এতে একেকজন পিঠা বিক্রেতার দিনে আয় দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রায় তিন থেকে চার মাস তাদের জীবিকা নির্বাহ হবে এই পিঠা বিক্রি করে।
মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার এলাকার কিরণ আক্তার বলেন, আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। পিঠা বানানোর সময় পাই না। তাই পরিবারের জন্য রাস্তার পাশ থেকেই চিতই পিঠা কিনে এনেছি। সঙ্গে সরিষা, শুঁটকি ও ধনিয়া পাতার ভর্তা এনেছি। সবাই অনেক মজা করে খেয়েছে।
মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকার পিঠা বিক্রেতা রিজিয়া বেগম বলেন, শীত এখনও তেমন পড়েনি। তারপরও পিঠা ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে শীত বেশি পড়লে পিঠা বিক্রিও বেশি হবে।
মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, পিঠা বাঙালির খাবারের মধ্যে একটি ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া, ব্যস্ততাসহ নানা কারণে এখন আর ঘরে ঘরে আগের মতো পিঠা বানাতে দেখা যায় না। তবে বর্তমানে মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও জনবহুল জায়গায় ভ্রাম্যমাণভাবে এক শ্রেণির মানুষ পিঠা বিক্রি করছেন। এতে করে আমাদের চাহিদা মিটছে পাশাপাশি পিঠার ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এফএ/জিকেএস