৫৩ বছরেও সেতুর স্বপ্ন অধরা সুরমা পাড়ের ১০ গ্রামের মানুষের

আহমেদ জামিল
আহমেদ জামিল আহমেদ জামিল , জেলা প্রতিনিধি সিলেট
প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো। এবার বাঁশের পরিবর্তে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ কাঠের সাঁকো। সুরমা নদীর ওপর দিয়ে এই সাঁকোতে চলাচলে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু একটি সেতুর স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সুরমাপাড়ের ১০ গ্রামের মানুষের।

শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ। সেতুটি নির্মাণ হলে এ দুই উপজেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথও খুলবে।

কিন্তু এতো অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে কানাইঘাট-জকিগঞ্জের সংযোগস্থল সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয়রা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও তাতে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই।

কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়ন সুরমা ও লোভাছড়া নদীর মাঝখানে অবস্থিত একটি দ্বীপের মতো। ইউনিয়নটির দক্ষিণ ও পূর্বপাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, উত্তরপাশে জকিগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে কানাইঘাট উপজেলা। জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের আটগ্রাম এলাকা দিয়ে এই ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। কিন্তু সুরমা নদীর ওপর সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ইউনিয়নটির অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বয়োবৃদ্ধ ও রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকোতে নদী পারাপার করতে হয় তাদের। এতে অনেক দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে।

এসব অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীদের বিষয় বিবেচনা করে এবছর বাঁশের পরিবর্তে ১০০ মিটার দীর্ঘ কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন ঘাটের ইজারাদার। তবুও এখানে সেতু নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

৫৩ বছরেও সেতুর স্বপ্ন অধরা সুরমা পাড়ের ১০ গ্রামের মানুষের

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরমার উত্তরপাড়ে কানাইঘাট উপজেলার কাড়াবাল্লা, কান্দিগ্রাম, বড়চাতল, মাজরগ্রাম, ফাটাউরা, এরালিগুল, দনা বাজার, সুরমা বাজার, বাকুড়ি, রাতাছড়া, খাশিয়াপুঞ্জি, রতনেরগুল, বালিছড়া, নগুড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াত এ পথ দিয়ে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকা হয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। তাছাড়াও লোভাছড়া পাথর কোয়ারি, খাসিয়াপুঞ্জি থেকে পান সংগ্রহ, পাহাড়ি এলাকা থেকে কলা, কমলা, কাঁঠাল, লটকন ও পেয়ারাসহ নানা ফলমূল বিক্রি করতেও সুরমা পাড়ি দিয়ে আসতে হয় মানুষজনকে।

অন্যদিকে লক্ষ্মীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নে খাসিয়াপুঞ্জি, পরিত্যক্ত পেট্রোবাংলা ও পাহাড়ি এলাকা ঘুরতে সারাবছর ওই এলাকায় যান পর্যটকরা। এতে করে এই ইউনিয়নের সঙ্গে মানুষের যাতায়াত অনেক বেশি। কিন্তু সুরমার ওপর সেতু না থাকায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

স্বাধীনতার পর থেকে এই এলাকার মানুষ সুরমার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সিলেট-৫ আসনের (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সাবেক সংসদ সদস্যরাও অসংখ্যবার সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কেউ সে কথা রাখেননি।

বড়চাতল গ্রামের মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও শুকনোতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সুরমা নদী পার হয়। এই ইউনিয়নে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নামেমাত্র একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো কলেজ নেই। যার কারণে ভালো স্কুল ও কলেজে পড়াশোনার জন্য সুরমা পাড়ি দিতে যুদ্ধ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া বয়স্ক ও রোগীরাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের এই সংযোগস্থলে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

কারাবাল্লা গ্রামের বাসিন্দা জামাল আহমদ বলেন, আমাদের জন্মের আগে থেকেই এখানে সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজে আসছে না। আসলে আমাদের অভিভাবক আছেন বলে মনে হয় না। তাই এই দুর্ভোগকেই সঙ্গী করে চলতে হচ্ছে।

সুরমা নদীর ঘাটের ম্যানেজার আলী আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর আমরা বাশের সাঁকো তৈরি করি। কিন্তু অনেকে এতে ভয় পান, দুর্ঘটনাও ঘটে। এবছর শুকনো মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে কাঠের তৈরি সাঁকো তৈরি করেছি। এতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিন থেকে চার মাস এই কাঠের তৈরি সাঁকো দিয়ে মানুষজন চলাচল করবে।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে একাধিকবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন না হওয়ায় সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সুরমা নদীর এই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের কোনো প্রস্তাব আমার কাছে আসেনি। আমি গত নভেম্বর মাসে সিলেটে যোগদান করেছি। এর আগে কোনো প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেটা সম্পর্কে আমার জানা নেই।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।