এক নারীর দুই স্বামী, রাজবাড়ীতে তোলপাড়
রাজবাড়ীতে গোপনে একসঙ্গে দুই স্বামীর সংসার করে আলোচনায় এসেছেন এক নারী (২২)। অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বিয়ের কথা গোপন ও স্বামীকে তালাক না দিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে কৌশলে দুজনের সঙ্গেই সংসার করছেন তিনি। বর্তমানে বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এমনই ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়ন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ওই নারীকে গোপনে বিয়ে করেন আলীপুর ইউনিয়নের সাগর শেখ (২৭)। বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাড়িতে একাই বসবাস করতেন ওই নারী। সে সুবাদে শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াত করতে থাকেন সাগর শেখ। হঠাৎ ওই নারীর বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরমধ্যে পারিবারিকভাবে মেয়ের বিয়ের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওই প্রবাসী বাবা। বাবার সিদ্ধান্তে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ওই নারী। বিয়ের পর তিনি বাড়িতেই থাকতেন।
অভিযুক্ত নারীর প্রথম স্বামী সাগর শেখের ভাষ্যমতে, প্রেমের সম্পর্কের পর প্রায় দুই বছর আগে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের বিষয়টি তার স্ত্রীর মা ও বোন জানতেন। তিনি শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। হঠাৎ শ্বশুর বিদেশ থেকে দেশে ফেরায় ওই বাড়িতে তার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পেশায় তিনি ইউটিউবার হওয়ায় বিয়ের চার মাসের মাথায় ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যান। ফিরে এসে জানতে পারেন, তার স্ত্রী আরেক ছেলেকে বিয়ে করেছেন। পরে তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পরিবারের চাপে বিয়ে করেছে এবং ওই ছেলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক হয়নি। তিনি শুধু তারই স্ত্রী।
পরে শ্বশুরবাড়িতে যেতে না পেরে স্ত্রীকে নিয়ে রাজবাড়ী শহরে তার (স্ত্রীর) বোনের বাসায় সময় কাটাতেন। গত ২ নভেম্বর তারা ওই বাড়িতে তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীও উদযাপন করেছেন। এর দুদিন পরে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। ওই ছেলে নিয়মিত বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্ত্রী তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং সংসার করবেন না বলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি স্ত্রীকে ফিরে পেতে গত ১১ নভেম্বর আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ এবং ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলা করেন।
সাগর শেখ বলেন, তাকে তালাক না দিয়ে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে প্রতারণা করেছেন তার স্ত্রী। তিনি স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসেন। যে কারণে এখন পর্যন্ত তার পেছনে ২৫-৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এখনো তিনি তার স্ত্রীকে ফেরত চান।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামী। তবে সাগরের সঙ্গে তার স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানলেও বিয়ের বিষয়টি জানা ছিল না বলে জানান।
দ্বিতীয় স্বামীর বাবা জানান, পারিবারিকভাবে ঘরোয়া আয়োজনে তার ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। এখন সাগর নামের ছেলেটি তাকে তার স্ত্রী বলে দাবি করছেন। বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নারীর মায়ের ভাষ্য, সাগর শেখের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। তবে বিয়ের দুই মাসের মধ্যে তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তখন কিছু না বুঝে ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। ডিভোর্সের ৪-৫ মাস পর মেয়েকে তারা আবার বিয়ে দিয়েছেন। এতদিন সাগর চাপে ফেলে তার মেয়েকে তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছেন।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, সাগর ও মেয়েটির তালাকের নোটিশের কোনো কপি এখনো পাননি। তবে এ বিষয়ে সাগর ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়ের বাবাকে নোটিশ দিয়ে ডেকে আনা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ছেলে, মেয়ে এবং তাদের অভিভাকদের নিয়ে বসা হয়েছিল। সেখানে মেয়েটি জানিয়েছেন, সাগরের সঙ্গে সংসার করবেন না।
রুবেলুর রহমান/এসআর/এএসএম