কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাঁদপুরে দুই কলেজে পাঠদান বন্ধ
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের পরপরই চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে ও গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে প্রায় একমাস যাবত বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম হয়ে উঠেছে। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা ও কর্মসূচির কারণে কলেজ দুটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অপরদিকে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ কলেজের মূল ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার সহধর্মিণী ডা. আনোয়ারা হককে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি গোপনে মনোনীত করা, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরি রানী সাহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপির একটি অংশ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধদের হাতে কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার যন্ত্রাংশ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়ে তার কক্ষে তালা মেরে দেন বিক্ষোভকারীরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কলেজ গেটে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন। একই সময় দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এসময় তাদের মধ্যে কয়েক দফায় হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের পাঠদান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুব মোরশেদ কচিকে সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষ হরিপদ দাসকে সদস্য সচীব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিএনপির অপর একটি গ্রুপের নেতা ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ ও তার অনুসারীরা।
গত ১৭ নভেম্বর এডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব মোরশেদ কচি সভা করার ঘোষণা দিলে আজাদের লোকজন কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন কচিকে ইউএনও অফিসে আসতে বলে। কচি উপজেলা পরিষদে প্রবেশকালে আজাদের লোকজন সেখানে তাকে প্রবেশ করতে না দিয়ে তাকে তুলে নিতে চায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে মাহবুব মোরশেদ কচি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে ডাক্তার আজাদ গ্রুপ তাকে অপহরণের চেষ্টা করেছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে বিএনপি নেতা এমএ হান্নান ও সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কঠোর অবস্থান এবং তাদের মারমুখি পরিস্থিতিতে কলেজের শিক্ষকরা তাদের ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা চিন্তা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হন।
উপজেলায় স্বনামধন্য দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ হওয়ার খবরে অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাঠদান না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে অনেকেই বিষয়টি দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবি জানান।
শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে কথা হয় গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হারুনুর রশিদ ও গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) গৌরি রানী সাহার সঙ্গে। তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আপাতত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। এটি খবুই দুঃখজনক। এই ধরনের কলেজগুলোর কমিটি যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেখে, আমি তাদের বলছি আপনারা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে বেঘাত সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেন। কোনো অভিযোগ থাকলে আইনি সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা অবশ্যই কঠোর অবস্থানে আছি।
শরীফুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম