গণঅভ্যুত্থান: আসামিকে চেনেন না মামলার বাদী
রংপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি মামলায় মনগড়া আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলার বাদী ২৫ জনের তালিকা দিলেও আসামি করা হয়েছে ১৮১ জন। যার অধিকাংশই অপরিচিত। এমনি একজন আসামি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুন্নবী ফুলু।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে মামলার প্রতিবাদ জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফুলু বলেন, আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতের ঘটনায় মামুনুর রশীদ নামে এক ব্যক্তি গত ১৩ নভেম্বর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলার ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ওই মামলায় আমাকে ১৪৭নং আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে আমার অবস্থান ছিল না।
ফুলু বলেন, মামলার বাদী মামুনুর রশীদ মামুনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না এবং তার সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। সেইসঙ্গে ধারণা করছি, মামুনও আমাকে চেনেন না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল হয়রানিসহ অবৈধ সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে আমাকে এই মামলায় জড়িয়েছে। মামুনুর রশীদ মামুনের দায়ের করা মামলা থেকে অবিলম্বে আমার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমার মতো নিরাপরাধ, নিরীহ মানুষদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে দায়ের করা এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক মামলা বাণিজ্যে জড়িত হোতাদের আইনের আওতায় আনারও জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও ২৯নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, নুরুন্নবী ফুলুকে আমি চিনি না। রাজনৈতিকভাবে এই মামলাগুলো করতে গেলে কিছু অসঙ্গতি থেকে যায়। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হবে।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর মামুনুর রশীদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে মামুনুর রশীদকে বলতে শোনা যায়, ‘তিনি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহানগর বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জামান সামু ১৮১ জনের নাম দেন।’
ভিডিওর ওই কথোপকথন ছিল রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শহর কমিটির সাবেক সভাপতি কাওছার জামান বাবলার সঙ্গে মামলার বাদী মামুনুরের। ভিডিওতে মামুনুরের উদ্দেশে কাওছার জামান বাবলা বলেন, ‘১৮১ জনকে আসামি করে তুমি একটা মামলা করেছো কোতোয়ালি থানায়। এখানে নীলফামারীর আসামি আছে। এখানে অনেক নিরীহ লোক আছে। যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এটা কেন তুমি করলা?’
জবাবে মামুনুরকে বলতে শোনা যায়, ‘বিএনপির মহানগর আহ্বায়ককে (সামসুজ্জামান) আড়াই মাস আগে ২৫টি নাম দিই। ৯ কি ১০ তারিখ মামলাটা লেখা হয়েছে। আমি সই করলাম। তখন আমি অসঙ্গতি দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, এতগুলো নাম কেন? বললো, এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। এতগুলো নাম দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না।’
এ নিয়ে কাওছার জামান বাবলা ভিডিওর কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দুই দিন আগে মাহিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তি তার কাছে এসে মামলার আসামি হওয়ার কথা জানান। তখন তিনি মামলার বাদী মামুনুরকে ডেকে নিয়ে তার বক্তব্য শোনেন। মামুনুর তখন তাকে বলেন, ১৮১ জন আসামির বিষয়ে তিনি জানেন না। তিনি ২৫ অভিযুক্ত ব্যক্তির তালিকা সামসুজ্জামানকে দিয়েছেন। ১৮১ জন আসামির বিষয়ে সামসুজ্জামান তাকে বলেছিলেন, এগুলো রাজনৈতিক মামলা। এভাবেই হয়।
কাওছার জামান বাবলার অভিযোগ, মামলা বাণিজ্য করার জন্য ইচ্ছামতো আসামি দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার নিরাপত্তা চেয়ে মাহিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন বলেও জানান কাওছার জামান বাবলা।
এ নিয়ে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে রংপুর মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত দুই দিন থেকে তার ও মহানগর বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য এই ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, মামলার বাদীকে চিকিৎসা বাবদ তিনি সহায়তা করেছেন। তবে মামলার আসামি কে বা কারা হবেন, সেটা তার বিষয় নয়। সামসুজ্জামান উল্টো কাওছার জামান বাবলা ও মহানগরের কয়েকজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন।
রংপুরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সামসুজ্জামান সামু বলেন, রংপুরের একটি মহল বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্টের গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র জনসম্মুখে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী দোসরদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন জনকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের নামে তা চালিয়ে দেওয়ার কূটকৌশল করছে। এই মহলটি দলীয় পদ-পদবির নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে। কিন্তু তারা বিগত খুনি হাসিনা হঠাও আন্দোলনে কোনো মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেয়নি। বরং তারা আন্দোলনকে ব্যাহত করতে নানা প্রকার প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে।
জিতু কবীর/এফএ/এমএস