সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের দাপটে দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাতক্ষীরা শহরে। মাঝে মধ্যে যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র থাকে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। সাতক্ষীরা শহরের ব্যস্ততম নিউমার্কেট ও পাকাপোল মোড়ে প্রতিদিনই লেগে থাকে এমন যানজট। বিশেষ করে সদর থানার পাশে পাকাপোলের দুই পাড়ের দুটি চার রাস্তার মোড়ে দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এ কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ সঠিক সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। এতে লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা বলছেন, এর মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান ও ইজিবাইকের অবাধ চলাচল।

এ সমস্যা নিরসনের জন্য অবৈধ যানবাহন বন্ধের বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যখনই ব্যবস্থা নিতে যায়, তখন কিছু সংগঠন গরিবের কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে আন্দোলন শুরু করে অভিযান বন্ধ করে দেয়।

পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, ইচ্ছা হলেই যেখানে সেখানে ‘অঘোষিত স্ট্যান্ড’ বানিয়ে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান, ইজিবাইক ও বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার ফলে এলাকার মূল সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

সাতক্ষীরা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পৌরসভায় ২০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। শহরের মধ্যে পড়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাতক্ষীরা পৌরসভা ৬৯৫টি ইজিবাইকের লাইসেন্স অনুমোদন করে। এরপরে আর কোনো লাইসেন্সের অনুমোদন দেয়নি পৌরসভা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম, সড়কের পাশে নেই ফুটপাতও। এখন সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যে প্রতিদিনই ৩-৪ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান চলাচল করছে। বেশি আয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং উপজেলা থেকে এসব যানবাহন সরাসরি শহরে প্রবেশ করছে। যে কারণে শহরবাসী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখন জনসাধারণের ভোগান্তির মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ ভ্যান ও ইজিবাইক।

প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে অবস্থান করে দেখা গেছে, শহীদ নাজমুল সরণি, শহীদ কাজল সরণি, শহীদ সিরাজ সরণি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বর থেকে ইটেগাছা পর্যন্ত, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের নিউ মার্কেট থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত, নারিকেলতলা-টাউন বাজার ব্রিজ হয়ে পাকাপোল, তুফান মোড়, সুলতানপুরের কেষ্টময়রার মোড়, বড়বাজার মোড়, নবারুন স্কুল মোড় ও পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইক চলাচল করছে। প্রধান সড়কগুলোতে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে।

শহরের নবরুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা খাতুন বলেন, যানজটের কারণে আমাদের স্কুলে যাতায়াত করতে সমস্যা হয়। সময়মতো স্কুলে পৌছাতে পারি না। ভ্যান-ইজিবাইকের কারণে আমাদের চলাচলে চরম অসুবিধা হচ্ছে। ছুটির পরে স্কুলের সামনে ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকে, আর এক পাশে গাড়ি চলে। যে কারণে চলাচল করতে পারি না, রাস্তা পার হওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের দাপটে দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী মাহিদা মিজান জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা পৌর এলাকার সড়কগুলো অপ্রশস্ত। রাস্তার পাশে কোনো ফুটপাত নেই। যেটুকু আছে সেখানে ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে। ছোট সড়কে হাজার হাজার অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইকের চলাচল একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা লক্ষাধিক মানুষের জীবনে নানা ধরনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, আশির দশক পর্যন্ত সাতক্ষীরার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল নদী কেন্দ্রিক। কিন্তু নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন যোগাযোগের একমাত্র পথ সড়ক। কিন্তু গত ৫০ বছরে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়ক ছাড়া আর কোনো নতুন সড়ক তৈরি হয়নি। এমন কি পুরাতন সড়কগুলো আগের মতোই রয়েছে, সেগুলো প্রস্থ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সময়ে শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে কমপক্ষে দশ গুন। প্রতিদিন ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালতে হাজার হাজার মানুষ শহরে আসছে। ফলে যানবাহন বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, শহরের মধ্যে প্রচুর অবৈধ যান চলাচল করে। ফুটপাতগুলো নানাভাবে দখল করে রেখেছে দোকানদাররা। এছাড়া শহরের বাইরে দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক থাকলেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচুর যানবাহন শহরের মধ্যদিয়ে চলাচল করছে। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষে যৌথভাবে কাজ করলে শহরের যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মুনীর জাগো নিউজকে বলেন, সড়কে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশ পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এর আগেও শহরের যানজট নিরসনে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে পৌরসভা থেকে অনুমোদিত ৬৯৫টি ইজিবাইক ছাড়া অন্য কোনো ইজিবাইক চলতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, শহরের যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আহসানুর রহমান রাজীব/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।