৬ একরের গ্রামে রয়েছে একটি বাড়ি, বসবাস করেন শুধু স্বামী-স্ত্রী

মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকার দত্তেরবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত শরীফগঞ্জ গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দা মাত্র দুজন। স্কুলশিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক ও তার স্ত্রী মাহফুজা বেগম মেরী দম্পতি। প্রায় ১৩০ বছর আগে খান সাহেব আলী তার বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে গ্রামের নামকরণ করেন শরীফগঞ্জ। এটি স্বল্পপুনিয়া মৌজায় অবস্থিত।

বাড়িতে বসবাসকারীরা মূলত মোঘল সেনাপতি রাজা মান সিংহের বংশধর। মান সিংয়ের বংশধর যোজার সিং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এখানে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। স্কুলশিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক যোজার সিংয়ের চতুর্থ বংশধর। রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক আমীর আলীর ছেলে। বর্তমানে স্কুলশিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।

দীর্ঘদিন টাংগাব হাজী ইসমাঈল দাখিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক। বর্তমানে অবসর নিয়ে কান্দিপাড়া আলিমুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন।

৬ একরের গ্রামে রয়েছে একটি বাড়ি, বসবাস করেন শুধু স্বামী-স্ত্রী

৬ একর জায়গা নিয়ে শরীফগঞ্জ গ্রামে গড়ে উঠেছে গাছ লতাপাতার সবুজের একটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। গ্রামের পূর্বদিকে আছে স্বল্পপুনিয়া গ্রাম, উত্তর দিকে আছে নয়াবাড়ী গ্রাম, দক্ষিণ দিকে আছে ময়ড়া গ্রাম, পশ্চিমে আছে সতরবাড়ী গ্রাম।

শরীফগঞ্জে রয়েছে ছয়টি পুকুর। রয়েছে শতবর্ষী ২৫ থেকে ৩০ রকমের আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, কমলা, স্ট্রবেরি, আঙুরসহ ফলদ ও ওষুধি জাতের গাছ। বাড়িতে রয়েছে আমীর আলী নামে ইসলামিক পাঠাগার।

৬ একরের গ্রামে রয়েছে একটি বাড়ি, বসবাস করেন শুধু স্বামী-স্ত্রী

পাশের গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রাম একটি বাড়ি নিয়ে গঠিত। বাড়িটিতে বর্তমানে এক শিক্ষক দম্পতির বসবাস।

পাশের গ্রামের কলেজছাত্র মোহাম্মদ আরমান বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রামের পরিবেশ খুব সুন্দর। এই গ্রামে দুইজন মানুষ বসবাস করেন। তাদের দুই সন্তান ঢাকায় থাকেন। তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত।

৬ একরের গ্রামে রয়েছে একটি বাড়ি, বসবাস করেন শুধু স্বামী-স্ত্রী

বর্তমানে বাড়িতে বসবাসকারী রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক বলেন, খান সাহেব আলী ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মুসলিম ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে শরীফগঞ্জ নামকরণ করেন। উনি আমার দাদা হন। ১৯২২ সালে রাজা পঞ্চাদশ উনাকে রোপ্য পদক প্রদান করে খান সাহেব উপাধি প্রধান করেন। ত্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমার ভাগিনা হয়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খান সাহেব আলীর তৃতীয় মেয়ের নাতি। আমাদের বংশে বর্তমানে ৮ জন মাস্টার্স ও ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছি। আমার বড় ছেলে ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউটার সাইন্সে মাস্টার্সে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দ্বিতীয় ছেলে ডুয়েট থেকে আর্কিটেক্টে পড়াশোনা করছে।

৬ একরের গ্রামে রয়েছে একটি বাড়ি, বসবাস করেন শুধু স্বামী-স্ত্রী

গফরগাঁও আদর্শ বিদ্যানিকেতনের প্রিন্সিপাল এইচ কবীর টিটু বলেন, শত বছর আগে উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নে ঈশা-খাঁ ও মান সিংহের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ঈশা-খাঁ জয়লাভ করেন। মান সিংহের কিছু লোকজন এখানে থেকে যান। তাদেরই বংশধরের এক বাড়ির গ্রাম শরীফগঞ্জ। এই বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষিত।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।