বরিশাল
আশ্রয়ণের বেশিরভাগ ঘরে তালা, বাকিগুলোতে থাকেন ভাড়াটিয়ারা
বরিশালে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বিগত সরকারের আমলে দেওয়া উপহারের বেশিরভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। সেখানে থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা এসব ঘরে থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় পাঁচটি ধাপে উপকাররোগীদের মাঝে পাঁচ হাজার ৯৬০টি দৃষ্টিনন্দন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঘর বরাদ্দ পেয়েও সেখানে থাকছেন না অনেকে। তাদের মধ্যে অনেকের অন্যত্র বাড়ি থাকায় অথবা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকায় উপহারের ঘরে এখন তালা ঝুলছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই শতাধিক তালা ঝুলানো ঘর দেখা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন। আবার অনেকে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নগদ টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছেন। তাই প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন অনেকেই ঘর পাননি। বেশিরভাগ সুবিধাভোগীকেই বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে অন্যত্র বসবাস করতে দেখা গেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অস্থায়ী গাড়িচালকও বরাদ্দ পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
সরেজমিন বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চরআবদানি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ২৭২টি ঘরের মধ্যে বেশিরভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। আবার যেসব ঘরে লোকজন রয়েছে তাদের বেশিরভাগই ভাড়াটিয়া। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দ পাওয়া উপকারভোগীরা ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে শহরে বসবাস করছেন।
পরে বরাদ্দপ্রাপ্তদের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তারা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কাছাকাছি স্কুল, মসজিদ- মাদরাসা না থাকায় তারা ঘর ভাড়া দিয়ে শহরে বসবাস করছেন।
কোনো কোনো ফাঁকা ঘরে খড়কুটো পালা দেওয়া ও গরু-ছাগল বেঁধে রাখতে দেখা যায়। ঘরের দেওয়ালে ধরেছে ফাটল। মেঝেতে ইঁদুর গর্ত করেছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরের চালা থেকেই বৃষ্টির পানি পড়ে বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া দিনমজুর ইলিয়াস আলী জাগো নিউজকে বলেন, এখানে কাছাকাছি কোনো স্কুল না থাকায় বরিশালের এক স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করিয়েছি। তাই আসা যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে এখানকার ঘর প্রতিমাসে এক হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে শহরে বাসা নিয়েছি। একই কথা বলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাড়া দিয়ে শহরে বসবাস করা অনেকেই।
চরবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা রোকেয়া বেগম জানান, প্রায় তিন বছর ধরে ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকছেন তিনি। ঘরের মালিককে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে ভাড়া দেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত যাদের দরকার তারা ঘর পাননি। যারা প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন ধরেছেন, তারাই ঘর পেয়েছেন। কিন্তু তারা ঘর পেলেও সেখানে একদিনের জন্যও বসবাস করেননি। ভাড়া দিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।’
ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অস্থায়ী গাড়িচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, তৎকালীন ইউএনওর সহায়তায় তিনি ঘর পেয়েছেন। দৈনিক ৫৫০ টাকা মজুরিভিত্তিক কাজ করেন বলে তিনি নিজেকে অসহায় ও ভূমিহীন দাবি করেন।
জেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। প্রকৃত ভুক্তভোগীরা ঘর বরাদ্দ না পেলেও পেয়েছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন। তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনরা।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
শাওন খান/এসআর/এএসএম