ছাত্রলীগের পদ পেয়েই কোটিপতি হন কাজী বাবলু

কাজল কায়েস কাজল কায়েস , জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০২৪
কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু-সংগৃহীত ছবি

‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে সম্প্রতি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তঃবর্তী সরকার। এরপর লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে কোটিপতি বনে যাওয়া নেতাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তেমনই এক নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু। তিনি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলের পর কাজী বাবলু দেশ ছেড়েছেন। চন্দ্রগঞ্জে হত্যাসহ যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হলেই আলোচনায় আসতো বাবলুর নাম। ছাত্রলীগের পদ পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে কোটিপতি বনে যান বাবলু। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের ব্যবধানে তিনি থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন।

যদিও ১২ এপ্রিল রাতে ছাত্রলীগ নেতা এম সজীবকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি হয়ে চাপে পড়েন বাবলু। এ ঘটনায় তিনি স্বেচ্ছাসেবকলীগের পদও হারান। সরকার পরিবর্তনের পর বাবলুও দেশ ছাড়েন। সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবলু জানিয়েছেন জীবন-জীবিকার তাগিদে বিদেশে আছেন। তবে সৌদি আরব না অন্য কোনো দেশে আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বাবলুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন-ফাইল ছবি

বাবলুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন-ফাইল ছবি

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জুলাইতে বাবলুকে ছাত্রলীগের থানা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। এরআগে দুইবার তিনি যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতা হয়ে তিনি চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ইজারা নেন নিজের নামে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো খাজনা আদায় করতেন। অনুগত নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত বাজার ও আশপাশের এলাকায় শক্তির মহড়া দিতেন। বাবলু ও তার অনুসারীরা ক্ষমতার দাপটে সালিশ-দরবার, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দখলসহ অপকর্ম করে বেড়াতেন। দলের সিনিয়র কেউ টু শব্দ করলেই অপমান-অপদস্ত করা হতো। হামলা চালিয়ে দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করা হতো। বাবলু তার অনুগতদের দিয়ে স্টিয়ারিং বাহিনী গড়ে তাদের মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা হারে বেতন দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন

থানা পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট সদর উপজেলার কুশাখালি ইউনিয়নের ঝাউডগি গ্রামের মোসলেহ উদ্দিনের বাগানে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কাজী বাবলুসহ একদল ডাকাত প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পরে বাকি ও আহমদ উল্লাহ শিপনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। আটকদের স্বীকারোক্তিতে ছাত্রলীগ নেতা কাজী বাবলুসহ ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা করেন। ওই মামলায় বাবলুকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ২০১২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে ডাকাতির চেষ্টাকালে ডাকাত নাছির ও বাবলুসহ ১০ জনকে আটক করে র্যাব-৭। তাদের কাছ থেকে ম্যাগজিনসহ পিস্তল, গুলি, ডাকাতির সরঞ্জাম ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। ওই মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ বাবলুসহ অন্যদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর জামিনে বের হয়ে এসেই পদ-পদবি বাগিয়ে বেপরোয়া হন তিনি।

গত ৪ আগস্ট ছাত্রহত্যার ঘটনায় এবং ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পর বাবলুর বিরুদ্ধে আদালত ও থানায় আরও তিনটি মামলা হয়েছে।

মানববন্ধনে অসুস্থ হয়ে পড়েন নিহত সজীবের মা-ফাইল ছবি

মানববন্ধনে অসুস্থ হয়ে পড়েন নিহত সজীবের মা-ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের তিন নেতা জানান, চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ফুটপাতের দুই শতাধিক দোকান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে তোলা চাঁদা বাবলুর হাত হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে যেত। এছাড়া তার একক নিয়ন্ত্রণে ছিল জেনারেটর, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবসা। নিজের সুবিধার্থে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করা হতো। বাবলুর ইশারায় চন্দ্রগঞ্জে সব অপকর্ম হতো। অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। এমপিসহ জেলা নেতাদের ম্যানেজ করে সে দাপট দেখাতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবলু আয়েশি জীবন-যাপন করতেন। তিনি চন্দ্রগঞ্জের পাচপাড়া গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন চারতলা ভবন। চন্দ্রগঞ্জ নিউ মার্কেটে ফ্ল্যাট, দোকান কিনেছেন। দেশ-বিদেশে ব্যাংক ব্যালেন্স ছাড়াও নামে-বেনামে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ৫-৭ বছর আগ থেকেই তাকে ‘কোটিপতি’ নেতা হিসেবে বলাবলি করতেন স্থানীয়রা। যদিও ছাত্রলীগ নেতা সজীব হত্যার ঘটনায় গত ২৮ এপ্রিল বাবলুসহ তিন নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ। বাবলুকে গ্রেফতারের দাবিতে তখন চন্দ্রগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন

চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বাবলু চন্দ্রগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পদবি ব্যবহার করে নিজে কোটিপতি হলেও দলের কোনো মঙ্গল হয়নি।

ছাত্রলীগের পদ পেয়েই কোটিপতি হন কাজী বাবলু

এমন বিতর্কিতদের পদ দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হতো-ফাইল ছবি

বক্তব্য জানতে কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর মোবাইল ফোনে কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করেও সাড়া মেলেনি। যদিও সজীব হত্যার পর বাবলু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে স্থানীয় নুরুল আমিন, সাবির আহমেদসহ একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছেন। তারাই তাকে হেয় করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানিয়েছিলেন, বাবলুর বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে এলাকাছাড়া। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।

কেকে/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।