কার্ডিওলজির ওষুধ লিখে দেন ডায়াবেটিসের চিকিৎসক, কমিশন নেন চেকে
ষাটোর্ধ আসমা বেগম (ছদ্মনাম)। ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা নিয়ে গোপালগঞ্জের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ডায়াবেটিস সমিতি ও জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানকার সিনিয়র কনসালটেন্ট (ডায়াবেটিলোজি) ও মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. কাজী রবিউল ইসলামকে দেখানোর পর তিনি ডায়াবেটিস ছাড়াও প্রেসক্রিপশনে কার্ডিওলজি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ লিখে দেন। প্রেসক্রিপশনে সিল মেরে লিখে দেওয়া হয়েছে ওষুধের কোম্পানি চেঞ্জ করা যাবে না। এতে সামর্থ্যের চেয়েও ধার করে দিগুণ টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে।
শুধু আসমা বেগমই নয় ডা. কাজী রবিউল ইসলামকে দেখানো এমন আরও পঁচিশ জন রোগীর প্রেসক্রিপশন জাগো নিউজের হাতে এসেছে। সবকটি প্রেসক্রিপশনে তিনি ডায়াবেটিস রোগের ওষুধের পাশাপাশি লিখেছেন কার্ডিওলজি ও আয়ুর্বেদ ওষুধ। রোগীর বুঝতে সহজ হবে যার কারণে তিনি ‘ডি’ ফর ডায়াবেটিস, ‘সি’ ফর কার্ডিওলজি এবং ‘ও’ ফর আদার্স উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে নিজে কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ না হয়েও রোগীর প্রেসক্রিপশনে কার্ডিওলজি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ লিখে কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা কমিশন নেন। তবে তিনি কমিশন নগদ টাকা বা গিফটে নয় চেকের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। যার প্রমাণও হাতে এসেছে জাগো নিউজের। দীর্ঘদিন ধরে একটি ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে চেকের মাধ্যমে কমিশন বাবদ অর্থ নিয়েছেন। তবে ওই চিকিৎসক বলছেন ভিন্ন কথা, রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে রিসার্চ করে কোম্পানিকে রিপোর্ট দেওয়ায় প্রণোদনা দিয়ে আসছে কোম্পানিটি।
যদিও অন্য চিকিৎসকরা বলছেন, ওষুধ বাজারে আসার আগেই রিসার্চ হয়ে আসে। সেটি রোগীর শরীরে ট্রায়াল করে রিসার্চ করার কোনো নিয়ম নেই।
আসমা বেগম জাগো নিউজকে জানান, শুধুমাত্র ডায়াবেটিস সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে যাই। ডা. কাজী রবিউল ইসলাম জিজ্ঞেস করেন- বুকে ব্যথা আছে কিনা। বুকে হালকা ব্যথা আছে বললে তিনি কার্ডিওলজির বিভিন্ন হাই পাওয়ারের ওষুধ লিখে দেন। দুটি আয়ুর্বেদিক ওষুধও লিখেছেন তিনি। ডায়াবেটিস ওষুধের পাশাপাশি ওই ওষুধ লেখায় আমার দিগুণ টাকা নষ্ট হয়েছে। অন্য চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশনটি দেখালে বাকি ওষুধ খেতে বারণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. কাজী রবিউল ইসলাম বলেন, নগদ টাকা নয় আমি চেকের মাধ্যমে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে প্রণোদনা নেই। এটি আমাকে তারা দেয় রিসার্চ করার জন্য। আমি রোগীকে ওষুধ লিখে দিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কোম্পানিকে রিপোর্ট দেই। যার কারণে আমাকে তারা প্রণোদনা দিয়ে থাকে। সেই টাকাই আমি চেকের মাধ্যমে নিয়ে থাকি।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ওষুধ বাজারে আসার আগেই রিসার্চ হয়ে আসে। সেটি রোগীর শরীরে ট্রায়াল করে রিসার্চ করার কোনো নিয়ম নেই। তিনি যদি এটা বলে থাকেন তাহলে তিনি নিজের দোষ ঢাকতে বলেছেন। চিকিৎসক সমাজের কেউ এটি সমর্থন করবে না।
সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, এমন কোনো নিয়ম নেই। তিনি যদি এটা করে থাকেন তাহলে নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে করেছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবো।
এ বিষয়ে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের সাবেক এক অধ্যাপক বলেন, কিছু চিকিৎসক কসাইখানা খুলে বসেছেন। প্রেসক্রিপশনে অতিরিক্ত ওষুধ লেখা, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাসহ নানাভাবে রোগীদের ঠকান। তারা এখান থেকে প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ কমিশন নিয়ে থাকেন। এতে রোগীর কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা নেওয়া হয়। এটার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরও কঠিন নির্দেশনা প্রয়োজন।
আরএইচ/এএসএম