ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গ
দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল যেন শিক্ষা নেয়: আবরার ফাহাদের মা
‘ছাত্রলীগ হত্যা, গুম, ধর্ষণসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। এর থেকে যেন দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল শিক্ষা নেয়। তাদের দলের অঙ্গসংগঠনের কেউ যেন অদূর ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের মতো খারাপ কাজ করতে আর সাহস না পায়। পরবর্তী ও বর্তমান সরকারের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা।’
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্যাতনে নিহত আবরার ফাহাদের বাবা রোকেয়া খাতুন।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের পাশে আবরারের বাড়িতে কথা হয় মা রোকেয়া খাতুন ও বাবা বরকত উল্লাহের সঙ্গে। এসময় তিনি জাগো নিউজের কাছে এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।
‘হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে তোমার সঙ্গে দেওয়া খাবার খেয়ে নাও’—পাঁচ বছর আগে আবরারের সঙ্গে এটাই ছিল মায়ের শেষ কথা। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সকালে আবরারকে নিজে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলেন মা।
ওইদিনের স্মৃতিচারণ করে অশ্রুসিক্ত চোখে মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘গতরাতে সংবাদে দেখলাম ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বৈরাচারী শাসনামলে ছাত্রলীগের দুঃসাহস যদি এতটা না থাকতো তাহলে তারা এতটা বিপদজনক হতো না। ওইরাতে আমার ছেলেকে তারা নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। সেটা পুরো দেশবাসী জানে।’
আরও পড়ুন
- ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলো সরকার
- গণমাধ্যমে ছাত্রলীগের প্রচার না করার আহ্বান মাহফুজ আলমের
- সরকারি চাকরি পাবেন না নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীরা: আসিফ মাহমুদ
তিনি বলেন, ‘ছেলে হত্যার পাঁচ বছর পর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, আগেও যেমন দেশবাসী আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তেমনিভাবে এখনো থাকবেন। কারণ আবরারকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার এখনো কার্যকর হয়নি। তিনজন আসামি এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত। সেইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগকে যারা ইন্ধন দিয়েছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আমার মতো হাজার হাজার মা সন্তান হারিয়েছেন। বর্তমান সরকার যেন প্রতিটি হত্যার বিচার করে। অসুস্থদের যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে। একজন মা হিসেবে এটাই আমার চাওয়া।
সন্তান হারানো কতটা কষ্টের তা শুধু একজন মা বোঝেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমার মতো আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সবার মা কষ্ট পাচ্ছে। খারাপ কাজের জন্য ছাত্রলীগকে বর্তমান সরকার নিষিদ্ধ করেছে, এটা দেশবাসী জানে।’
এসময় পাশেই ছিলেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ছেলে হত্যার বিচার শেষ হয়নি। ছেলেকে হত্যায় ছাত্রলীগের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত ছিল। যাদের মামলায় আসামি করা হয়নি। জানতে পেরেছি ছাত্রলীগকে সরকার নিষিদ্ধ করেছে। আমার দাবি, যে সংগঠনই হোক না কেন, যারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করবে, তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
প্রসঙ্গত, বুয়েটের শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্যাতনে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে নিহত হন আবরার ফাহাদ। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি।
আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম