ভোলা

১৭ বছর রোগী ভর্তি নেই হাসপাতালে, ডাক্তার আছেন একজন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ০৮:০১ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

নামমাত্র চলছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যা হাসপাতাল। চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। সপ্তাহে দু-একদিন আসেন। তবে দেওয়া হয় না ওষুধ। কেননা হাসপাতালে ওষুধ নেই। শুধু ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন তিনি। এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবের সহায়তায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচায় দক্ষিণ চর আইচা ২০ শয্যা হাসপাতালটি স্থাপিত হয়। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলে ১৯৯৮ সালের ৩০ জুন স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) আওতায় হাসপাতালটি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। এরপর ২০০২ সালের দিকে শুরু হয় আন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি সেবা কার্যক্রম। কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে চিকিসৎক ও নার্সরা সরকারি রাজস্ব খাতে নিয়োগ পেয়ে অন্যত্র চলে গেলে বন্ধ হয়ে যায় আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগের সেবা কার্যক্রম। ৩-৪ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে জরুরি সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান।

হাসপাতালে ৩২টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৩টি পদ। চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংযুক্তিতে চিকিৎসা দেন মেডিকেল অফিসার ডা. তালহা সামিউল হক। তাও সপ্তাহে ১-২ দিন।

১৭ বছর রোগী ভর্তি নেই হাসপাতালে, ডাক্তার আছেন একজন

দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আনোয়ার হোসেন, নার্গিস বেগম, গোলাপজান বেগম ও রুমা বেগম জানান, তারা গরিব মানুষ। জ্বর ও ঠান্ডা সমস্যার নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বসে থেকেও ডাক্তারের দেখা পাননি। অবশেষে ডাক্তার না দেখিয়েই তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

দক্ষিণ আইচা থানার মেঘনা নদীর বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন থেকে আসা হারুন মাঝি ও এনায়েত মাঝি এবং চর কুকরি-মুকড়ি ইউনিয়ন থেকে থেকে আসা মিজানুর ও নাজমা বেগম জানান, তারা হতদরিদ্র মানুষ। টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই তারা দুই ঘণ্টা নদী পাড়ি দিয়ে ট্রলারে করে দক্ষিণ আইচা হাসপাতালে এসেছেন। এসে দেখেন ডাক্তার নেই।

কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন ও মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তারা জানান, হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে কর্মচারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এলাকার কিছু বখাটে গাঁজা ও ইয়াবা সেবন করেন। অনেকে ছাগল পালন করছেন।

১৭ বছর রোগী ভর্তি নেই হাসপাতালে, ডাক্তার আছেন একজন

আব্দুল মান্নান ও জুলফিকার তালুকদার নামের দুজন বলেন, দক্ষিণ আইচা হাসপাতালটি স্থাপিত হলে এলাকার গরিবসহ সব শ্রেণির মানুষ খুশি হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে ইনডোর-আউটডোর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রোগীদের প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গরিব মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব।

তারা আরও জানান, বিচ্ছিন্ন চর কুকড়ি-মুকড়ি ও ঢালচর থেকে গুরুতর রোগী নিয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই অনেক রোগী মারা যান। যদি দক্ষিণ আইচা হাসপাতালটি পুরো চালু থাকতো তাহলে এমন অবস্থা হতো না। হাসপাতালটির সব সেবা চালুর দাবি জানান তারা।

১৭ বছর রোগী ভর্তি নেই হাসপাতালে, ডাক্তার আছেন একজন

এ বিষয়ে ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি কিছুদিন হলো যোগদান করেছেন। তবে শিগগির হাসপাতালটি পরিদর্শনে যাবেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।

দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, তিনিও নতুন যোগদান করেছেন। হাসপাতালে মাদকসেবীদের আড্ডা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।