আবু সাঈদের মৃত্যু প্রতিনিয়ত তাড়া করতো শহীদ হাসাইনকে
‘ছেলে শহীদ হয়েছে। দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে। এটি অনেক বড় প্রাপ্তি। আল্লাহ যেন তাকে কবুল করেন’—এসব কথা বলে নিজেকে এখন এভাবেই সান্ত্বনা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হাসাইন মিয়ার (১২) মা সাজেদা আক্তার।
তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার ছেলে স্বপ্ন দেখতো, আমাদেরও স্বপ্ন দেখাতো। লেখাপড়া করে বড় হয়ে ইচ্ছে ছিল বিদেশ যাবে। অনেক টাকা হবে। বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচবে। কেউ আর তাদের আড় চোখে দেখবে না। টাকা হলে সবাই তাদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করবে। অনেকেই তাদের কাছে আসবে। ঈদে নিজেরা কোরবানিও করতে পারবে। ঘাতকের একটি বুলেট তার সব স্বপ্ন মুছে দিলো।’
সাজেদা আক্তার বলেন, “আবু সাঈদের মৃত্যু যেন সে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছিল না। প্রতিদিনই তার একমাত্র ছোট বোনকে বলতো, ‘আমাকে গুলি কর, আমি আর বাঁচতে চাই না’। আমার ছেলে চিরদিনের মতো আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলো।”
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ছোড়া একটি বুলেট এসে লাগে কিশোর হাসাইন মিয়ার কপালে। সঙ্গে সঙ্গে সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। ওইদিন বানিয়াচংয়ে প্রথম শহীদ হয় সে। এরপর একে একে ঝরে যায় ৯টি তাজা প্রাণ।
স্থানীয় এলআর হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল হাসাইন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাবা ছানু মিয়া ফেরি করে সবজি বিক্রি করেন। জেলা শহর থেকে সবজি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে এলাকায় বিক্রি করছেন। টানাপোড়েনের সংসার।
শহীদ হাসাইনের বাবা ছানু মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে শহীদ করেছে ঘাতকরা। আমার ছেলের পুরো শরীর ভালো ছিল। শুধু কপাল থেকে মাথাটা শেষ করে দিয়েছে। আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই।’
বানিয়াচং উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘হাসাইন আমার প্রতিবেশী। ওইদিন যেহেতু স্বৈরশাসক পালিয়ে গেছে, তাই সবাই আনন্দ মিছিল করতে বের হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘাতকরা ওই মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালালে প্রথম শহীদ হয় হাসাইন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, ওইদিন ঘাতকরা গুলি চালিয়ে হাসাইনসহ ৯ জনকে শহীদ করেছে। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। পাশাপাশি সরকারকে এসব পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানাই।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসআর/এমএস