নিষেধাজ্ঞা অমান্য
অভিনব কৌশলে সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকারের মচ্ছব
সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অবাধে মা ইলিশ শিকার করছেন মৌসুমি জেলেরা। আভিযানিক টিমের চোখ ফাঁকি দিয়েই মাছ শিকার করা হচ্ছে। এজন্য যে উদ্দেশ্যে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। গত ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য সরকার চাল বরাদ্দ দেয়। এরপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে মাছ ধরছেন অনেকে।
সরেজমিন দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিষখালী নদীর ভবানীপুর, চাঁদপুরা, হদুয়া লঞ্চঘাট, পুরান হদুয়া বাজার, নলবুনিয়া, ইসলামপুর, তেঁতুলবাড়িয়া লঞ্চঘাট ও সুগন্ধা নদীর মগড় জাঙ্গালিয়া ইটভাটা, অনুরাগ, দপদপিয়া, মাটিভাঙা এলাকায় চলছে অবাধে মা ইলিশ শিকার। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীদের ছত্রচ্ছায়ায় মাছ শিকার করছেন জেলেরা। বিপুলসংখ্যক মাছ ধরার ডিঙ্গি নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নদী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবানীপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নিষেধাজ্ঞা শুরুর পরদিন থেকেই রাত ১০টার পর বাজারের শেষ মাথায় নদীর পাড়ে ভবানীপুর, চাঁদপুরা ও নাচনমহলের কিছু প্রভাবশালী লোক এসে জেলেদের সঙ্গে চুক্তি করে মা ইলিশ শিকারে নদীতে নামান। তারা কূলে বসে পাহারায় থাকেন। অভিযানের টহল টিম ভবানীপুরের দিকে দেখাই যায় না।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কোম্পানিতে কাজ করা বেশকিছু শ্রমিক বাড়িতে এসে মা ইলিশ নিধনে নেমেছেন। আগে নদীতে জাল ফেললে দু-চারটে ইলিশ ধরা পড়তো। কিন্তু এখন নদীর নির্দিষ্ট পয়েন্টে জাল ফেলতে পারলেই ডিমওয়ালা ইলিশের সঙ্গে প্রচুর জাটকা ধরা পড়ছে। জেলেরা নৌকা থেকে নামিয়ে নদীর তীরের ঝোপ-জঙ্গলে ও কচুরিপানার মধ্যে মাছ লুকিয়ে রাখছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলে এসে ব্যাগভর্তি করে এসব মাছ সস্তায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় কার্ডধারী কোনো জেলে মা ইলিশ শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়লে ‘জেলে কার্ড’ বাতিলসহ তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। প্রশাসনের এমন সতর্কতার কারণে কার্ডধারী অনেক জেলে নিজে নদীতে না নেমে নৌকা ও জাল দিয়ে মৌসুমি জেলেদের সহযোগিতা করছেন। এজন্য মাছের একটা ভাগ নিচ্ছেন তারা। এলাকার কিছু লোক নৌকা তৈরি করে মৌসুমি জেলেদের কাছে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে নৌকাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকার চুক্তি করে তারা নদীতে জাল ফেলছেন।
প্রশাসন নদীতে অভিযানে নামলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের ফোন করে জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা আছে বেশকিছু তথ্য সরবরাহকারী। বিনিময়ে প্রত্যেককে ৫০০-৬০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এদের কাজ হলো নদীপাড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং নদীতে অভিযানে নামলেই মা ইলিশ নিধনকারী মৌসুমি জেলেদের সাবধান করে দেওয়া।
জেলেরা জানান, বর্তমানে প্রচুর ইলিশ জালে উঠছে। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি নিরাপদ। তাই তারা রাতেই বেশি জাল ফেলছেন। বিক্রির জন্য তাদের কোনো চিন্তা করতে হয় না। সাধারণ ক্রেতারা নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন মাছ কেনার জন্য। কিছু ক্রেতা মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন। ফোন দিলেই তারা এসে মাছ নিয়ে যান।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রমনী কুমার মিস্ত্রী বলেন, আমরা প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই জেলেদের সরকারি নিয়ম মানতে উদ্বুদ্ধ করেছি। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি আমরা যখনই সংবাদ পাচ্ছি, তখনই অভিযান চালানো হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মিটার জাল জব্দ ও দুই জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আতিকুর রহমান/এসআর/এমএস