বগুড়া থেকে রপ্তানি হচ্ছে পুঁই, করলা, টমেটো ও শসার বীজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
ফাইল ছবি

পণ্য রপ্তানিতে চমক দেখাচ্ছে উত্তরের বাণিজ্য জেলা বগুড়া। এখানকার উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের নানা দেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বগুড়া রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রপ্তানি তালিকায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন পণ্য।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য বলছে, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়েসহ ইউরোপের অন্তত ১৮ দেশে যাচ্ছে বগুড়ার পণ্য। প্রতিবছর বড় হচ্ছে এই রপ্তানি বাণিজ্যের বাজার।

প্রচলিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে–সুতা, বস্তাসহ পাটজাত সামগ্রী, রাইস ব্র্যান অয়েল বা চালের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল, সৌদি রাজকীয় পোশাক, গার্মেন্ট পণ্য বা তৈরি পোশাক, জালি টুপি, হস্তশিল্প পণ্য, ডিজিটাল স্কেল, ট্রান্সফরমার, সেচ পাম্প, ধান মাড়াই যন্ত্র, টিউবওয়েল, নকশিকাঁথা, আলু, মরিচ, ভুট্টা, দেশি পাবদা ও শিং মাছ।

সম্প্রতি বগুড়া থেকে মালয়েশিয়ায় পুঁইশাক, করলা, পালংয়ের বীজ রপ্তানি করা হয়। নতুন করে তালিকায় যোগ হয়েছে টমেটো ও শসার বীজ। একই ধরনের পণ্য নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার রাইস ব্র্যান অয়েল, পাটজাত পণ্য, পানির পাম্প, যন্ত্রাংশ ও কৃষি যন্ত্রাংশ, কৃত্রিম চুল (পরচুলা), আলু, ভুট্টা ও সবজি বীজের বড় বাজার হলো ভারত, নেপাল, রাশিয়া ও মালয়েশিয়া। এছাড়া এই পণ্যের চাহিদা অনুসারে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রেও।

রাইস ব্র্যান অয়েল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে মজুমদার প্রডাক্টস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের নাম স্বর্ণা রাইস ব্র্যান অয়েল। এরপর রয়েছে তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এছাড়া ওয়েস্টার্ন এগ্রো প্রডাক্ট লিমিটেড, কিবরিয়া ট্রেডার্স লিমিটেড, এ আর এন্টারপ্রাইজ, আলাল এগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডও রাইস ব্র্যান অয়েল প্রস্তুত ও রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। কিবরিয়া ট্রেডার্স ও তামিম এগ্রো সাম্প্রতিক সময়ে রাইস ব্র্যান অয়েল বাদ দিয়ে ভুট্টা রপ্তানি করছে বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলেন, রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদনে রয়েছে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা। এর মধ্যে অন্যতম ধানের কুঁড়ার অপ্রতুলতা। মূলত ধানের তুষ ছাড়ানোর পর চালের গায়ে বাদামি যে অংশ থাকে, সেখান থেকে এই তেল নিষ্কাশন করা হয়। এখন যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ কুঁড়া সব সময় পাওয়া যায় না। বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের পর থেকে পচনশীল সবজির মধ্যে পুঁই, করলা, পালং, টমেটো রপ্তানির চাহিদা বেড়েছে। সেইসঙ্গে শসার বীজ নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ বেশ ভালো।

রপ্তানিকারক মাশওয়া এন্টারপ্রাইজের আরিফ আজাদ বলেন, বিদেশের বাজারে বগুড়ার আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার কাঁচামরিচ, আলু ও সবজি রপ্তানি হচ্ছে।

এ আর এন্টারপ্রাইজের আবদুল ওয়াহিদ বলেন, মালয়েশিয়ায় সবজি বীজ রপ্তানি হচ্ছে নিয়মিত। এখন ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।

সাগর ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাগর হোসেন ফকির বলেন, আমার ক্ষেতের উৎপাদিত গ্রানুলা, অ্যাসটরিক, দেশি পাকড়িসহ কয়েক জাতের আলু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় নিয়মিত যাচ্ছে। আমি ছাড়াও জয়পুরহাটের কালাই থেকে আরেকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ আলু রপ্তানি করছে। শিবগঞ্জ, কালাই, ক্ষেতলাল থেকেও রপ্তানি করছে একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে আয় ছিল ৫ কোটি ৮৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৮৮ মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ মার্কিন ডলার। করোনার কারণে ২০২০ সালে পণ্য বিক্রি কিছুটা কমে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৫ কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ৯৪ মার্কিন ডলার। পরে ২০২১ সালে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩১২ মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে ৫ কোটি ৭২ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৯ মার্কিন ডলার, ২০২৩ সালে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৫ মার্কিন ডলার এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে পণ্য রপ্তানিতে আয় হয় ৩ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলার। দেশে ডলার সংকটসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গেলো দুই বছরে রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিলেও এখন সংকট কেটে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার রপ্তানিকারকরা বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে উত্তরের অন্য জেলার চেয়ে বগুড়া বরাবরই বেশ এগিয়ে। এখনো এখানকার সেচ পাম্প দেশের বাজারে রাজত্ব করছে। কিছু রপ্তানিকারক বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে সার্টিফিকেট অব অরিজিন নিয়ে পণ্য রপ্তানি করেন। আবার অনেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার থেকেও সার্টিফিকেট অব অরিজিন নিয়ে পণ্য রপ্তানি করছেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, গ্রামীণ নারীদের তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প রপ্তানি হয় জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের ১৮টি দেশে। জালি টুপি রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। প্রতিবছর কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার টুপি রপ্তানি হয় বগুড়া থেকে। এছাড়া বিশেষ ধরনের রাজকীয় পোশাক রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে।

রপ্তানিকারক হাসান জুট মিল ও হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিং মিলের মালিক শফিকুল হাসান জুয়েল বলেন, এক যুগ হলো রপ্তানি শুরু করেছি। প্রতিবছর রপ্তানি বাড়ছে। উৎপাদিত পণ্য মানসম্মত এবং দাম কিছুটা কম হওয়ায় ভারতের বাজারে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ী মিনহাজুল আজিজ বলেন, এখানকার জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট, হুডি এবং সোয়াট শার্ট রপ্তানি হয়। চাহিদা অনুসারে যোগান দেওয়া যায় না। সাধারণত জাহাজে ও মাঝেমধ্যে বিমানেও পণ্য পাঠানো হয়।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আগের কয়েক বছর ভালো ব্যবসা হয়নি। তবে এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। এখন বগুড়া থেকে আশানুরূপ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।