আহত ঈগলকে সুস্থ করে ৪ মাস পর অবমুক্ত
রাজবাড়ীতে আহত ঈগলকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রায় চার মাস পর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ঈগলটি অবমুক্ত করা হয়।
এসময় জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস, জেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা শেখ হুমায়ুন কবির, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দীন আহমেদ, প্রাণিপ্রেমী সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিকে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির ঈগল পাখিটিকে ডানা ভাঙ্গা অবস্থায় উদ্ধার করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে চিকিৎসক জানান, পাখিটি বেশ কিছুদিন নিজেদের হেফাজতে রেখে পরিচর্যা ও চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু সেরকম কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই।
এসময় ওই বন কর্মকর্তা প্রাণিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তীর কাছে আহত ঈগলটি সেবা-শুশ্রুষার জন্য হস্তান্তর করেন। পরে লিটন তার আরাম ঘরের (শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্র) একটি কক্ষে ঈগলটিকে রেখে পরিচর্যা করতে থাকেন। প্রায় দুই মাস পর ঈগলটি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে সবার অগোচরে উড়ে চলে যায়। পড়ে হঠাৎ প্রায় দুই মাস পর সেপ্টেম্বরে পাখিটি আবার আহত অবস্থায় আরাম ঘরের পাশের একটি বাড়ির চালে এসে বসে। তখন আরাম ঘরের সদস্যরা পাখিটি উদ্ধার করে আবার সেবা-শুশ্রূষা শুরু করেন।
লিটন চক্রবর্তী জেলা শহরের টিএনন্টিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি একজন প্রাণী ও সাংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। তার প্রতিষ্ঠিত আরাম ঘরে শিশুরা নিয়মিত সংস্কৃতিক চর্চা করে।
লিটন চক্রবর্তী বলেন, পাখিটিকে বন বিভাগের কর্মকর্তার অনুরোধে প্রায় ৪ মাস আগে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে সেবা-শুশ্রূষার জন্য তার সংস্কৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা আরাম ঘরে নিয়ে আসেন। আহত ঈগলটি সেবা-শুশ্রূষার প্রায় দুই মাস পর অবমুক্ত করার আগেই উড়ে চলে যায়। পড়ে হঠাৎ দুই মাস পর আবার আহত অবস্থায় ফিরে আসে সে। এরপর প্রায় এক মাস সেবা-শুশ্রূষার পর ঈগলটি সুস্থ করে আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দীন আহমেদ বলেন, আহত ঈগলটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় অবমুক্ত করা হয়েছে। পাখিটি মাটিতে নামানোর সাথে সাথে উড়ে গেছে।
রাজবাড়ী জেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা শেখ হুমায়ুন কবির বলেন, এই ঈগলটাকে দুই ধাপে প্রায় ৪ মাস সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। প্রকৃতিতে চলার মতো হওয়ায় ঈগলটিকে আজ অবমুক্ত করা হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস বলেন, বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ অফিস ও লিটন চক্রবর্তীর সমন্বয়ে একটি মানবিক কাজ করেছে। এটাই দৃষ্টান্ত। একটি আহত পাখিকে উদ্ধারের পর সুস্থ করে আবার অবমুক্ত করা। লিটন চক্রবর্তীর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে রাতে রাস্তায় একটি ছোট কুকুর ছানা পেয়ে এখানে দিয়েছেন এবং আজ দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ কুকুর ছানাটি প্রাণবন্ত ও তাজা।
রুবেলুর রহমান/জেডএইচ/এমএস