রংপুর
তথ্য উপদেষ্টার সভায় ঘটা বিশৃঙ্খলার ব্যাখ্যা দিলেন সাংবাদিকরা
রংপুরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের মতবিনিময় সভায় কী হয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়।
রংপুরের সাংবাদিকদের সাতটি সংগঠনের পক্ষে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর রংপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনের সভাকক্ষে রংপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের মতবিনিময় সভায় অনাকাঙ্ক্ষিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রতিবাদে রংপুরের সাতটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) রংপুর প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের মতবিনিময় সভায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ওইদিন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা রংপুরের সাতটি সাংবাদিক সংগঠনের মধ্য থেকে প্রত্যেক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধিকে নাম ও সংগঠনের পরিচয় দিয়ে কথা বলার জন্য বলেন। কিন্তু তার নির্দেশ অমান্য করে বিশৃংখলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র রংপুর জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম জাকির হুসাইন রংপুর প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেন। এসএম জাকির হুসাইন কোনো সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য নন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোপূর্বে তিনি একটি সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। কাজেই তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার কথা মোতাবেক তিনি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিতে পারেন না।
তারপরই নিয়ম ভেঙে আদর রহমান নামে আরেকজন ফটো সাংবাদিক প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে বিষোদাগার শুরু করেন। তিনিও সাতটি সংগঠনের সদস্য নন। বক্তব্য শুরুর এক পর্যায়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আপত্তি জানালে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক এসএম জাকির হুসাইনের নেতৃত্বে সাংবাদিক নামধারী রবিন চৌধুরী রাসেল, আতিকুর রহমান আতিক, এনামুল হক স্বাধীন, শিল্পী আক্তারসহ অজ্ঞাতরা হট্টগোল শুরু করেন।
হট্টগোল শুরু হলে উপদেষ্টা বিরক্তবোধ থেকে মতবিনিময় সভার স্থান ত্যাগ করেন। পরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী নামধারী ওই সাংবাদিকেরা ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃতভাবে ছড়িয়ে দিয়ে রংপুরের সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন। তাদের পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলার কারণে তথ্য উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য থেকে রংপুরবাসী বঞ্ছিত হয়। পাশাপাশি রংপুরের সাংবাদিক সমাজ তাদের বক্তব্য তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টাকে জানাতে ব্যর্থ হন।
সংবাদ সম্মেলনে মেরিনা লাভলী বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রংপুরের সাতটি সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য সদস্যবৃন্দকে নিয়ে রংপুর প্রেসক্লাবে গত ১৪ অক্টোবর (সোমবার) মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় সর্বসম্মতক্রমে বিশৃঙ্খলাকারী ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। রংপুরের সাতটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া সাতটি সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে সাংবাদিক স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাংবাদিক স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাত সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ অন্য সাংবাদিকরা সেদিনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মতামত তুলে ধরেন।
সভায় রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোনাব্বর হোসেন মনা, সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের সভাপতি শাহ বায়েজিদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লুলু, সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম রাজু, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু নাগ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর কমিটির সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-টিসিএ রংপুরের সভাপতি শাহ নেওয়াজ জনি, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুমন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রংপুর বিভাগীয় কমিটির মাহফুজ আলম প্রিন্সসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
জিতু কবীর/এফএ/এএসএম