ডিমের লাভ যাচ্ছে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটে
খামারিরা একটি ডিমে লাভ করতে পারেন ২০ পয়সা। আর খামার থেকে ডিম কিনে এনে আড়তে পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি ডিমে লাভ করছেন দুই টাকা। আর খুচরা বিক্রেতারা প্রতি হালি ডিমে লাভ করছেন দুই টাকা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন গলাকাটা লাভের ব্যবসায় নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের। ডিমের বাজারে অভিযান চালিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ভোক্তা অধিদপ্তর।
পাবনার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকার বেশি। দোকানভেদে ডিমের দামে কিছুটা কমবেশি রয়েছে। গলির ভেতর বা টঙ দোকানগুলোতে আরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খামার থেকে পাইকাররা ১১ টাকা দরে প্রতিটি ডিম বিক্রি করছেন। এতে প্রতি ডজন ডিমের দাম হচ্ছে ১৩২ টাকা অর্থ্যাৎ প্রতি হালি ৪৪ টাকা। খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে হালি প্রতি ডিমের দর বেড়ে যাচ্ছে প্রায় ১০ টাকা।
বেশ কয়েকজন খামারি জানান, তারা প্রতি ডিমে ২০ পয়সার মতো লাভ করছেন। আর পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী মিলে এক হালি ডিমেই লাভ করছেন ১০ টাকা। এর অর্থ প্রতি ডিমেই তারা লাভ করছেন আড়াই টাকা।
খামারিরা জানান, কারসাজি কিন্তু পাইকার ও খুচরা ব্যসায়ীদের মধ্যে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ডিমের বাজার সহনশীল হবে। বড় বড় কোম্পানি এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি মিলে এই ডিমের বাজার অস্থির করে ফেলছে। প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দাম নির্ধারণ করে না। সিন্ডিকেট ডিমের দাম বাড়ালে খামারি বাড়তি দামে বিক্রি করে। সিন্ডিকেট দাম কমালে খামারি কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের জোতগাছা গ্রামের আলতাফ পোলট্রি খামারের মালিক আলতাফ হোসেন জানান, তার খামারে বর্তমানে প্রায় ২৩ হাজার মুরগি আছে। প্রতিদিন ডিম উৎপাদিত হচ্ছে ২২ হাজার। তিনি খামার থেকে সরকার নির্ধারিত ১১ টাকা দরে প্রতিটি ডিম বিক্রি করছেন। এতে প্রতি ডজন ডিমের দাম হচ্ছে ১৩২ টাকা।
এদিকে পাবনার বড় পাইকারি ডিমের বাজার টেবুনিয়া আড়তে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৬ টাকা দরে। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খামার থেকে পাইকারি আড়তে ডিমের দামে পার্থক্য ২০ থেকে ২৫ টাকা। তার মানে খামার থেকে পাইকারি বাজারে ওঠার পরই এক ডিমের দাম দুই টাকা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়েছে।
পাইকারি বাজার থেকে জেলা শহরের খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ৫৩ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের খুচরা ডিম বিক্রেতারা বলেন, তারা প্রতিটি ডিমে ৫০ পয়সা পর্যন্ত লাভ করেন। এতে প্রতি ডজনে ৫-৬ টাকা পর্যন্ত লাভ হয় তার। প্রতি হালিতে লাভ করেন দুই টাকা। তবে জেলার অনেক জায়গায় খুচরা প্রতি হালি ডিম ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দোকানভেদে ডিমের দামে কিছুটা কমবেশি রয়েছে।
অপরদিকে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা দিশাহারা।
সদর উপজেলার দুবলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক খাাঁন জানান, বর্ষা মৌসুমে হাঁসের ডিমের প্রাচুর্য থাকায় ডিমের দাম কম থাকে। কিন্তু এবার লেয়ার মুরগির ডিমের দাম না কমায় হাঁসের ডিমেরও দাম বেশি।
তিনি জানান, সংসারে ডিম অতি প্রয়োজনীয়। নাস্তার টেবিল থেকে শুরু করে শিশুদের টিফিনে থাকতে হয় ডিম। অথচ এত দাম বাড়ার কারণে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের হিমসিম অবস্থা।
বেড়া উপজেলার কাশীনাথপুরের কলেজশিক্ষক আলাউল হোসেন জানান, একজন খামারি কয়েক লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে কয়েকজন কর্মচারির বেতন দিয়ে এক ডিমে লাভ করেন ২০ পয়সা। এর উপর তাদের মুরগির রোগ- বালাই, মড়কসহ কত ঝুঁকি রয়েছে। অথচ পাইকাররা রেডিমেড কিনে এনেই এক ডিমের ওপর লাভ করছেন দুই টাকা। এটা অনেকটা মগের মুল্লুক। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের মতো ক্রেতাদের অবস্থা কাহিল।
তবে পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, খামার থেকে ডিম সংগ্রহের পর পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ তাদের কিছু ব্যয় হয়। অন্যদিকে ভেঙে কিছু ডিম নষ্ট হয়। এজন্য খরচ বেড়ে যায়। লাভের কিছু অংশ সেখানে চলে যায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পাবনার সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহবুব আলম জানান, ডিমের অসাধু আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযানের বিকল্প নেই। যথাযথ মনিটরিং হলেই বাজার সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রণি জানান, জেলায় হঠাৎ করে ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের মূল্য ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে তা ১৩ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়।
তিনি জানান, ডিমের অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খামারিরাও জড়িয়ে পড়েছেন। যে কারণে খামারিদেরও জরিমানা করা হচ্ছে। বাজারে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির ফলে নানাভাবে সুযোগ নিয়ে মূলত বেশি লাভবান হচ্ছেন আড়তদার ও খুচরা দোকানিরা।
এফএ/জিকেএস