কাজে আসছে না ৩৭ লাখ টাকার সেতু, নৌকায় নদী পারাপার
রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার শাখা মানাস নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি কাজে আসছে না। পানির স্রোতে সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় টাকা দিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন মানুষজন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সময়ের অপচয় হচ্ছে ওই এলাকার ১০ গ্রামের মানুষের।
কাউনিয়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সরকার ও ইউএসএআইডির অর্থায়নে বালাপাড়া ইউনিয়নের মোলভি বাজার এলাকায় তিস্তার শাখা মানস নদীর ওপর ৩৭ লাখ ২৪ হাজার ১৮৩ টাকা ব্যয়ে ১৭ মিটার দৈর্ঘ্যর একটি বক্স সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে ওই গ্রামসহ আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘব হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের তিন বছর পরেই শুরু হয় দুর্ভোগ। বন্যায় সেতুটি হেলে পড়ে এবং দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়।
একপর্যায়ে স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত ওই সেতুর দুই পাড়ে অস্থায়ীভাবে সাঁকো নির্মাণ করেন। সম্প্রতি ভারত থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে সাঁকোসহ সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত সাত বছর সংযোগ সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় সেতু পার হতে বাঁশ ও কাঠের সাঁকোটিই ছিল পারাপারের অন্যতম মাধ্যম। সেটিও এবার ধসে গেছে পানির স্রোতে।
সেতুটি দিয়ে দৈনিক স্থানীয় গোপীডাঙ্গা, আরাজী খোর্দ্দ ভূতছাড়া, মৌলভী বাজারসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াত। এছাড়া লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের ভরসা এই সেতুটি। এর দুই প্রান্তের মাটি ধসে পড়ায় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের হাজারও মানুষকে প্রতিদিন টাকা দিয়ে নৌকায় ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, সেতুর দুই পাশে ধসে যাওয়া মাটির সংযোগ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে মূল সেতুর সঙ্গে চলাচল উপযোগী করা হোক। সরকারি বরাদ্দ মিললে নতুন করে সেখানে সেতু নির্মাণেরও দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
গোপীডাঙ্গা গ্রামের শামসুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘তিস্তার মানস নদী পার হওয়ার জন্য ১০ গ্রামের মানুষের চাওয়া ছিল একটি পাকা সেতু। কিন্তু যে সেতুটি হয়েছে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত। বহু বছর ধরে নেই সংযোগ সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও সড়ক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’
আরাজী খোর্দ্দ ভূতছাড়া গ্রামের কৃষক আমিন আলী বলেন, হেলে পড়া সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নেই। টাকা দিয়ে নৌকায় নদী পার হতে হয়। এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
বালাপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকার মানুষজন নিজেদের উদ্যোগে সেতুতে চলাচল করতে দুই পাড়ে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করেছিলেন। সেটিও আকস্মিক বন্যায় ভেঙে গেছে। এখন দুই পাড়ের মানুষদের প্রতিজন ১০ টাকা করে দিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছে। এতে করে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নদী পারাপার হতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, দুই পাড়ের লোকজনের ভোগান্তি লাগবে জরুরি ভিত্তিতে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন উদ্যোগ নিলে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
সেতুটির সংযোগ সড়কের সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর এলাকা সরেজমিন সার্ভে করা হয়েছে। আকস্মিক বন্যার পানির জোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। শিগগির ঢাকা থেকে একটি দল আসবে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। অর্থ বারদ্দ সাপেক্ষে নতুন করে সেতু নির্মাণসহ সংযোগ সড়কের কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে কাঠের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জিতু কবীর/এসআর/এএসএম