ভোগান্তির আরেক নাম প্রিপেইড মিটার
নীলফামারীতে ভোগান্তির আরেক নাম হয়ে উঠছে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার। গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় ২০২১ সালে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) গ্রাহকদের জন্য চালু করে বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার। ভোগান্তি কমবে- এ আশায় অধিকাংশ গ্রাহক পুরনো মিটার বদলে আধুনিক সুবিধার এ প্রিপেইড মিটার নেন।
কিন্তু ভোগান্তি কমার আশায় নেওয়া প্রিপেইড মিটারই যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। মিটার ভাড়া, ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জের নামে বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। আগের মিটারের তুলনায় নতুন প্রিপেইড মিটারে দুই-তিনগুণ বিল বেশি আসে বলে অভিযোগ তাদের।
শহরের পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ী হাবিবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মাসের প্রথমদিনে যদি এক হাজার টাকা মিটারে ঢুকাই তাহলে ৮২০ টাকা অটো কেটে নেয়। তাহলে আমরা কীভাবে ব্যবসা করবো। এমন করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেই ভয় লাগে। আগের পুরোনো মিটারে এতো টাকা বিল দিতে হতো বলে আমার মনে হয় না।
আরেক ব্যবসায়ী রক্সি রহমান বলেন, মিটারে টাকা ঢুকালেই কী কী চার্জ নিয়ে আগে টাকা কেটে নেয়। মিটার লাগানোর সময় বলছিল এ মিটারের সুবিধা বেশি। এখন দেখছি সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি। আগে যেখানে প্রতিমাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিল আসতো এখন টাকা ঢুকাতে হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
সদরের উপজেলার চৌধুরীর পাড়ার নেসকোর গ্রাহক মহসিন চৌধুরী বলেন, আগের মিটারের তুলনায় প্রিপেইড মিটারে দুই বা তিনগুন বিল বেশি আসে। মিটার ভাড়া, ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জের নামে বিভিন্ন খাতে অনেক টাকা কেটে নেয়। তাই এখন আমরা প্রিপেইড মিটারের পরিবর্তে আবার আগের ডিজিটাল মিটার ফিরে যেতে চাই।
শহরের ঢাকাইয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা সিজানুর রহমান সিজান বলেন, নিজের টাকা দিয়ে মিটার কিনেও টাকা ঢুকালেই প্রতি মাসে ৪০ টাকা কাটে শুধু মিটার ভাড়া বাবদ। আমার মিটার, আমাকেই আবার ভাড়া দিতে হয়। এছাড়াও আরও চার্জতো আছে। আমরা আর এ মিটার চাই না। আমরা আগের ডিজিটাল মিটার চাই।
নীলফামারী নেসকো সূত্র অফিস জানা যায়, নীলফামারী নেসকোর অধীনে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও সেচগ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৪২ হাজার। এরমধ্যে বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক রয়েছেন ৩৫ হাজার। প্রিপেইড মিটারে প্রতিমাসের প্রথম রিচার্জে ডিমান্ড চার্জ বাবদ প্রতি কিলোওয়াটে ৪২ টাকা, মিটার ভাড়া ৪০ টাকা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কাটা হয়।
এ বিষয়ে নীলফামারী নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিমুল ইসলাম সেলিম কোনো প্রশ্ন না করার শর্তে বলেন, আবাসিকে বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে আমাদের কয়েকটি স্লাপ রয়েছে। যেমন ধরেন ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৬৭ পয়সা আবার যখনই আপনি ৬০০ ইউনিটের উপরে যাবেন তখন প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ৬১ পয়সা হারে টাকা কাটবে। যখন কোনো গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৬০০ ইউনিটের স্লাপটাও পার করে যায় তখন ১৪টাকা ৬১ পয়সা হারে প্রতি ইউনিটে টাকা কাটে। এজন্য গ্রাহকদের মনে হয় টাকা ঢুকাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আরএইচ/জিকেএস