স্টেশনের ৪০ শতাংশ কাজ করেই উধাও ঠিকাদার
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৬ মাস আগে। অথচ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারের লোকজনের দেখা নেই। ফলে ভবন না থাকায় স্টেশনের নিয়ন্ত্রণসহ যাবতীয় কার্যক্রম চলছে প্ল্যাটফর্মের ওপর তৈরি করা টিনের ঘরে। এতে অনেকটা অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে স্টেশন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা ভবনের মূল কাজ শেষ করেছে। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের কাজের টাকা ছাড় দিচ্ছে না। তাই তারা কাজ করতে পারছে না।
আর রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বারবার ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার তাগাদা দিচ্ছে। ঠিকাদারও কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপর টিনের ঘেরা দেওয়া ঘর। তার ভেতরে রয়েছে স্টেশন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি। একপাশে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্ল্যাটফর্মের পেছনে মাটির ওপর ভবনের কলাম ও বিম উঁকি দিচ্ছে। পাশেই রয়েছে নামফলক। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নামফলকটি উন্মোচন করেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কুমিরা রেলস্টেশন মাস্টার আবুল বশর বলেন, শুনেছি ২০২১ সালেই নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণের জন্য পুরোনো স্টেশন ভবনটি ভাঙা হয়। এরপর থেকে তারা টিনের ঘরে প্ল্যাটফর্মের ওপর আছেন। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ কিছুদিন ভালোভাবে চলছিল। এরপর হঠাৎ ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ করে দেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, স্টেশনটির একতলা ভবন নির্মাণে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই দরপত্র পান মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার এ কার্যাদেশ পান ২০২২ সালের ৫ জুলাই। কাজটি শেষ করার কথা ছিল গত বছরের ১১ মে। এখন পর্যন্ত ঠিকাদার ৩২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। কাজ শেষ হয়েছে ৪০ শতাংশ।
অর্থসংকটের কথা জানিয়ে মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্সের মালিক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কাজ ফেলে রাখতে চান না কোনো ঠিকাদার। কাজ বন্ধ হওয়ার পর চার টন রড চুরি হয়েছে ওই এলাকা থেকে। এজন্য তারা রেলওয়ে থানায় মামলাও করেছেন। রেলওয়ের একাধিক দপ্তরে তাদের কাজ চলছে। কিছু কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বিল এখনো রেলওয়ে থেকে পাননি। তাই তারা অর্থসংকটে পড়েছেন। ওই স্টেশন ভবনের ফাউন্ডেশন হয়ে গেছে। ফলে বেশিরভাগ কাজ শেষ। এখন এক মাসের কাজ বাকি আছে। তাঁরা দ্রুত কাজ শুরু করবেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল হানিফ বলেন, ঠিকাদারের অর্থসংকট আছে, এটা বলার সুযোগ নেই। তাদের কাজ শেষ করতেই হবে। একটা নির্দিষ্ট সময় দেখবেন তারা। পরে ওই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদারকে দিয়ে অবশিষ্ট কাজ করানো হবে। সেক্ষেত্রে আগের ঠিকাদারতো কিছু পাবেন না। বরং তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জিকেএস