পদ্মায় ভাঙন
‘দাবি একটাই,বাঁধ চাই’
‘নদী পাড়ের বাসিন্দারা সবাই দরিদ্র জেলে ও দিনমজুর। আমাদের একমাত্র সম্বল বসতবাড়ি। আমরা কারো কাছে কোনো সহযোগিতা চাই না। আমাদের দাবি একটাই, মজবুত বাঁধ চাই।’
পদ্মার ভাঙন কবলিত পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ৫নং ঘাট এলাকার বাসিন্দা ওহিদুল ইসলামসহ এলাকার সবার কণ্ঠে এখন একই দাবি।
৫নং সাঁড়া ঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষ। তারা অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। নদী অনেকের বসতবাড়ি থেকে মাত্র ৭- ১০ মিটার দূরে। নদীতে পানি বাড়লেই এ এলাকার বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় থাকেন। গত বছর মৎস্য সমিতির অফিস ও দোকানপাট নদীতে ভেঙে গেছে। এ বছরও বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাঁড়া ঘাট থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই ঈশ্বরদী ইপিজেড। সাঁড়াঘাটে বাঁধ না দিলে এক সময় ভাঙন ইপিজেডে গিয়ে ঠেকবে। নদী তীর রক্ষার জন্য এ বছর জিও ব্যাগ (বালির বস্তা) ফেলা হয়েছে। কিন্তু এতেও মনে হয় শেষরক্ষা হবে না। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে এখানকার বসতবাড়ি ও দোকানপাট।
জানা যায়, উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের মধ্যে শুধু মাঝের ৫ নম্বর সাঁড়াঘাট এলাকার এক কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ নেই। প্রতিবছর পদ্মায় পানি বাড়লেই ভাঙন আতঙ্কে থাকেন এখানকার মানুষেরা। নদীর পাড়ে বসবাসকারী দরিদ্র এসব মানুষ এর আগেও একাধিকবার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এখন শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ঠাঁই পাওয়া এই বসতভিটা ভেঙে গেলে তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়বেন।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে দেশের অন্যতম নৌবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল সাঁড়া। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাইসহ দেশ-বিদেশের বড় বড় জাহাজে মালামাল আসতো এ বন্দরে। পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের পর এ নৌবন্দর গুরুত্ব হারাতে থাকে। এক সময় নৌবন্দরের পাকা স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যায়। উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া পর্যন্ত আট কিলোমিটার নদীর তীরের মধ্যে পাকশী ইউনিয়নে দুই কিলোমিটার ও সাঁড়া ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ রয়েছে। শুধু মাঝের ৫ নম্বর সাঁড়াঘাট এলাকার এক কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ নেই। প্রতিবছর পদ্মায় পানি বাড়লেই ভাঙন আতঙ্কে থাকেন এখানকার মানুষেরা।
এখন যেখানে নদীর তীর সেখান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিল নদী। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙতে ভাঙতে এখন নদী বাড়ি থেকে মাত্র ৭-১০ মিটার দূরে রয়েছে। এবার ভাঙনে হয়তো সাঁড়া ৫ নম্বর ঘাটের কোনো চিহ্ন থাকবে না। বসতবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাঁধ নির্মাণের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে এসে বাঁধ নির্মাণের জন্য মাপামাপি করেন কিন্তু বাঁধ নির্মাণ হয় না।
সাঁড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা ওহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নদী পাড়ের বাসিন্দারা সবাই দরিদ্র জেলে ও দিনমজুর। আমাদের একমাত্র সম্বল বসতবাড়ি। আমরা চাল, ডাল, আটা, গম কিছুই চাই না। কোনো সহযোগিতা চাই না। আমরা একটি টেকসই বাঁধ চাই। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির সামনে এসে গেছে। আমরা আর বসতবাড়ি হারাতে চাই না।
রেজাউল ইসলাম বলেন, নদীর পাড়ে আমাদের বাড়ি। বেশ কিছুদিন ধরে নদীর পানি বাড়ছে-কমছে। গত তিনদিন ধরে বেড়েই চলেছে। পানি বাড়লে আমাদের চোখে ঘুম আসে না। নদীতে কখন ভাঙন শুরু হবে তাতো বলা যায় না। মনে আতঙ্ক থাকে কখন বাড়ি-ঘর নদীতে ভেঙে যাবে। নদীর পাড়ে বালির বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয়েছে। কিন্তু এ বস্তাতো স্থায়ী নয়। আমরা একটি স্থায়ী বাঁধ চাই। যাতে আমরা স্বস্তি ও শান্তিতে থাকতে পারি।
হাজী সিদ্দিকুর রহমান জানান, নদী পাড়ে যারা বসবাস করে তারা সবাই দরিদ্র মানুষ। মাছ ধরা এদের পেশা হলেও বিভিন্ন পেশার মানুষ এখানে বাস করে। এসব দরিদ্র মানুষদের বসতবাড়ি এখন ভাঙনের মুখে। বাঁধ দেওয়া ছাড়া এসব বাড়ি-ঘর রক্ষা করা যাবে না।
সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রফিক বলেন, সাঁড়া ৫ নম্বর ঘাটের দুই পাশে আট কিলোমিটার নদীরক্ষা বাঁধ রয়েছে। অথচ মাঝের এ এলাকায় এক কিলোমিটারে বাঁধ নেই। এ বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাপঝোক করে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এখানকার বাসিন্দারা অধিকাংশই জেলে ও দরিদ্র কৃষক। তাদের মাথা গোজার ঠাঁইটুকু নদীতে বিলীন হয়ে গেলে এরা নিঃস্ব হয়ে যাবে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরহাদ হোসাইন বলেন, সাঁড়া ৫ নম্বর ঘাট এলাকার ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এখানে একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখানে বাঁধ নির্মাণ হতে পারে।
শেখ মহসীন/এফএ/এএসএম