কচুরিপানা-কলাগাছে আটকা পানি নিষ্কাশন, তলিয়েছে ৫০০ হেক্টর জমির ফসল
পাবনার ঈশ্বরদীতে খালের পাড়ের জমি ইজারা (লিজ) নিয়ে কলাগাছ রোপণ করেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। কলা পাকার পর গাছ কেটে তা খালে ফেলেছেন। খালে থাকা কচুরিপানা সঙ্গে কলাগাছ আটকে পানি নিষ্কাশনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পরপর তিন দফা প্রবল বর্ষণে ৫০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এতে আমন ধান, আগাম শিম, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হওয়ায় কৃষকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা এজন্য ছাত্রলীগ নেতাকে দায়ী করেছেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা এ দায় অস্বীকার করেছেন।
কৃষকরা জানান, কৃষি জমির জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর থেকে নিকরহাটা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সরকারি উদ্যোগে খাল খনন করা হয়। এই খালের প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গা নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মালিকানাধীন মুলাডুলি বাণিজ্যিক ইক্ষু খামারের সম্পত্তি। খামার কর্তৃপক্ষ খালপাড়ের জমি বছর চুক্তিতে ইজারা দেয়। এ জমির বৃহৎ অংশ ইজারা নেন উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি মালিথা।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, বাপ্পি মালিথাসহ অন্য ইজারা গ্রহীতারা গাছ থেকে কলা সংগ্রহের পর তা কেটে খালে ফেলে দেয়। খালে থাকা কচুরিপানার সঙ্গে কলাগাছ আটকে পানি নিষ্কাশনের বাধা সৃষ্টি হয়। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় তিন গ্রামের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। তিন-চারদিন আগে খালের কিছু অংশ থেকে কলাগাছ তুলে ফেলেছেন বাপ্পি মালিথার লোকজন। কিন্তু এতে খুব একটা বেশি উপকার হয়নি কৃষকের। কারণ ক্ষতি যা হওয়ার তা আগেই হয়েছে।
উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম বলেন, এ মাঠে আমার ৪০ বিঘা জমিতে ধান, শিম ও ঢ্যাঁড়শের আবাদ ছিল। সব জমির ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ এলাকার আবাদি জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য মুলাডুলি আখ খামারের পাশ দিয়ে একটি খাল আছে। এ খালে কলা গাছ, বাবলা গাছ পড়ে আছে। খালে গাছপালা পড়ে থাকার পাশাপাশি কচুরিপানার স্তূপ রয়েছে। এতো প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি বের হতে পারেনি। ফলে এ মাঠের শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আকমল হোসেন বলেন, পতিরাজপুর থেকে নিকরহাটা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পুরো খাল কচুরিপানা ও কলাগাছে জ্যাম হয়ে আছে। আমার ৬ বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে আছে। এমনিতেই আমরা জলাবদ্ধতায় শেষ হয়ে গেছি। খাল পরিষ্কার না করলে আরও শেষ হয়ে যাবো।
কৃষক মুন্তাজ আলী মণ্ডল বলেন, ক্যানেলে (খাল) কলাগাছ ও কচুরিপানার জন্য পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যানেল যখন ছিল না, তখনো কৃষকদের এত ক্ষতি হয়নি। এবারের জলাবদ্ধতায় গ্রামের শত শত কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেছে। এ ক্যানেল থেকে কলাগাছ ও কচুরিপানাসহ সব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, খাল পরিষ্কার না করায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এবছর অতিবৃষ্টির কারণে পানি বেশি হয়েছি। তেমনি ক্যানেলেও এর আগে এমন অপরিষ্কার ছিল না। ইতিপূর্বে কখনো জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের ক্ষতি হয়নি। তাই সবার প্রতি অনুরোধ আমাদের খাল পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে দিন।
কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, কচুরিপানা ও কলার গাছের কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের কাছে দাবি খুব দ্রুত যেন এই ক্যানেল পরিষ্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পি মালিথা নিজেকে কৃষক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার আখ, ধান ও কলার আবাদ আছে। কিছু কৃষক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, খালে কলা গাছ ফেলার কারণে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। আমি বলবো এ অভিযোগ সত্য নয়। এ খালে প্রচুর কচুরিপানা রয়েছে শুধুমাত্র এ জন্য পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয়নি। এছাড়া ক্যানেলের পাশে থাকা বাবলাসহ বিভিন্ন গাছ ক্যানেলে পড়ে পানি প্রবাহের বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে জলাবদ্ধতার কারণে অন্য কৃষকদের মতো আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত।
মুলাডুলি বাণিজ্যিক আখ খামারের ইনচার্জ আনোয়ারুল ইসলাম আমিন জাগো নিউজকে বলেন, এ খালের বেশিরভাগ জায়গা মুলাডুলি ইক্ষু খামারের। খাল খননের পর খাল পাড়ের জায়গা বছর চুক্তিতে স্থানীয়দের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। তারা কলাসহ বিভিন্ন আবাদ করেন। কলা সংগ্রহের পর গাছ খালে ফেলানোর বিষয়টি আমি শোনার পর লিজ গ্রহীতাদের কলা গাছ সরিয়ে নিতে বলেছি। এখানে বন বিভাগের কিছু গাছ রয়েছে এগুলোও ভেঙ্গে খালে পড়েছে তাদেরও বিষয়টি জানিয়েছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানকার অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল ছিল তার পাশ দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের লাগানো কলাগাছ কেটে বিভিন্ন সময় খালে ফেলে পানি নিষ্কাশনের পথ অবরোধ করা হয়। এছাড়া ক্যানেল দীর্ঘদিন অপরিষ্কার থাকায় পানি ধীরগতিতে বের হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও ক্যানেল পরিষ্কারের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় উপস্থাপন করেছি।
শেখ মহসীন/জেডএইচ/জেআইএম