আন্দোলনে নিহত নুর আলম

পরিবার সহযোগিতা পেলেও বঞ্চিত স্ত্রী-সন্তান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:০৯ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন নুর আলম। পরে চিকিৎসার জন্য গাজীপুর হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ২১ জুলাই নুর আলমের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন স্বজনরা।

এরইমধ্যে নুর আলমের মৃত্যুর আড়াই মাস পর স্ত্রী খাদিজার কোলজুড়ে এসেছে পুত্রসন্তান মো. আব্দুল খালেক। একদিকে নুর আলমের মৃত্যুর খবরে তার পরিবারের প্রতি সরকারি, বেসরকারি ও রাজনৈতিকভাবে অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে নুর আলমের স্ত্রী খাদিজার অভিযোগ স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভকালীন অবস্থায় তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। এখন তারা তার সন্তানের খোঁজও রাখেন না। ফলে নিজের ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সদ্য স্বামীহারা খাদিজা। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুর আলমের বাবা।

পেশায় রাজমিস্ত্রী নুর আলম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগঙাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের মো. আমীর হোসেন ও নুর বানু বেগম দম্পতির বড় ছেলে। বাবা ভ্যানচালক, মা পোশাক শ্রমিক। গাজীপুরের তেলিপাড়া গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নুর আলম।

নুর আলমের স্ত্রী মোছা. খাদিজা খাতুন বলেন, ঘটনার দিন সকালে উঠে আমার স্বামী বাইরে এসেছিল। দুপুরের পর শুনি সে গুলিতে মারা গেছে। দৌড়ে এসে দেখি আমার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওইদিন রাতেই স্বামীর মরদেহ নিয়ে গ্রামে চলে আসি। অল্প বয়সে আমি স্বামী হারিয়েছি। এই কষ্ট বোঝাতে পারবো না। আমার ভবিষ্যৎ কী হবে জানি না। তবে আমার ভবিষ্যৎ এখন নুর আলমের রেখে যাওয়া আমানত ছেলে আব্দুল খালেক। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। জানি না কপালে কী আছে?

তিনি বলেন, স্বামী হারানোর শোক যে কী, যে স্বামী হারিয়েছে সেই জানে। এতকিছুর মাঝে আমি আরও বড় আঘাত পেয়েছি নুর আলম মারা যাওয়ার ৪৪ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে স্বামীর ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। গর্ভবতী অবস্থায় আমার শ্বশুর আমার হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে রাত পার করে আমার বাবাকে ফোন দিই। পরদিন বাবা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আজ ছেলে জন্ম হওয়ার ২১ দিন, তবু ওরা আমার আর সন্তানের খোঁজ নেয়নি। এমনকি সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে গেলে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার নওয়াবুরকে দিয়ে নাম পাল্টানোর চেষ্টা করে। চৌকিদার যোগসাজশ করে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার শ্বশুরের হাতে দিয়ে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা করছে। সেই টাকার খবর যাতে আমি না শুনি, এ কারণে পরিকল্পিতভাবে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

খাদিজা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। আমি আমার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছি।

অপরদিকে নুর আলমের বাবা মো. আমীর হোসেন বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নুর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা আসতেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ লাখ টাকার চেক পেয়েছি। তবে সেই টাকা এখনো ওঠাতে পারিনি। জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৫ হাজারসহ অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও আশ্বাস ও সহযোগিতা পাঠাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার নাতি ও ছেলের বউ খাদিজা বর্তমানে ওর বাবার বাসায় আছে। তার সঙ্গে আমরা কোনো ঝগড়া বিবাদ করিনাই। সে নিজ ইচ্ছায় ওর বাবার বাসায় চলে গেছে।

এ বিষয়ে ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. নুর আলম। আমি তার পরিবারের নিয়মিত খোঁজ খবর রেখে আসছি। নুর আলমের স্ত্রীর সঙ্গে তার বাবা-মায়ের কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়েছে কি না জানি না। জন্মনিবন্ধনের জন্য নুর আলমের শ্বশুর আমার এখানে এসেছিলেন। সন্তানের নাম পরিবর্তন বিষয়ে কী ঘটেছে আমার জানা নেই।

ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।