পরচুলায় স্বাবলম্বী পাবনার দুই শতাধিক নারী
পরচুলা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার নারীরা। নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বক্তারপুর, রাকসা ও কাশীনাথপুর ইউনিয়নের টাংবাড়ি এলাকার দুই শতাধিক নারী এই পরচুলা তৈরির কাজ করছেন। গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি এ পণ্যটি রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে।
সম্ভাবনাময় এ শিল্প গ্রামের মেয়েদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি কর্মদক্ষ করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অনেক ছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করে নিজেদের খরচ যোগাচ্ছেন। গৃহবধূরা সংসারে বাড়তি আয় করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। এ খাতে কাজ করছেন দুই শতাধিক নারী।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি পরচুলা টুপি বানাতে সময় লাগে দুই-তিনদিন। একজন কারিগর মাসে ৮-১০টি পরচুলা টুপি বানাতে পারেন। এতে প্রকারভেদে ৫০০-১৩০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। প্রতিটি টুপিতে ২০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত চুল লাগে। টুপি তৈরিতে লাগে মাথার ডামি, চুল, নেট, সুচ, সুতা, চক ও পিন।
পরচুলা তৈরির কারিগররা জানান, প্রতিটি টেবিলে স্ক্রুর সাহায্যে আটকানো থাকে প্লাস্টিকের ডামি মাথা। ডামি মাথার ওপর থাকে নেট। নেটের ফাঁকে ফাঁকে সুচের ফোঁড়ে আটকানো হয় একেকটি চুল। ডামির পুরো মাথায় সূক্ষ্মভাবে চুল আটকানো হয়। প্রতিটি টেবিলে মুখোমুখি হয়ে তারা কাজ করেন। তাদের অনেকেই আবার বাড়িতে বসে কাজ করেন।
বেড়া উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের এক উদ্যোক্তা ওসমান গণি জানান, পরচুলা তৈরির এসব উপকরণ তিনি ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন। পরচুলা তৈরি করে আবার ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে থেকে দেশের বাইরে রপ্তানি হয়। তার কারখানায় নারীরা কাজ করে মাসে ৮-১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছেন।
পরচুলা তৈরির কারখানায় কাজ করা কারিগর সোনিয়া খাতুন, রোকেয়া খাতুন জানান, এখানে কাজ করে তারা সংসারে বাড়তি আয় করে সচ্ছলতা এনেছেন।
রাকসা গ্রামের সোহেল রানার কারখানার কারিগর নবম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় সাত-আট হাজার টাকা উপার্জন করি। যা দিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে সংসারে দেই। একটি টুপি তৈরি করতে দুই-তিনদিন সময় লাগে। তবে স্কুল ছুটি থাকলে একদিনেও করা যায়।
কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার যুথী বলেন, তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করে পড়ার খরচ জোগান ও সংসারে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় হোসেন জানান, এলাকার বেকার যুবক ও মেয়েরা পরচুলা তৈরি করে নিজেদের আর্থিক চাহিদা মিটিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। সরকার যদি এ শিল্প খাতে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে এলাকায় আরও কারখানা গড়ে উঠতে পারে। এতে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে যাবে।
বেড়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, জাতসাখিনী ও আমিনপুরে মোট পাঁচটি পরচুলা তৈরি কারখানা হয়েছে। এখানে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীরা ও গৃহিণীরা প্রায় দুই শতাধিক নারী এ কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের হাতের তৈরি এই পরচুলা আমাদের দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে প্রায় ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সমাজ সেবা অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক গোলাম সারোয়ার জানান, এমন উদ্যোগ দারিদ্র বিমোচনে বিরাট ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের মতো এ খাতটিকে প্রতিষ্ঠিত করা গেলে আরও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/জেডএইচ/জেআইএম