উপকরণের দাম বাড়লেও পারিশ্রমিক বাড়েনি প্রতিমাশিল্পীদের
আগের তুলনায় কাজ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি পারিশ্রমিক। প্রতিমা তৈরির সব উপকরণের দাম চড়া। উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।
এভাবেই হতাশা ব্যক্ত করেন টাঙ্গাইলের প্রতিমাশিল্পীরা। তারা বলছেন, মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। তারপরও বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে কাজ করছেন তারা।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদরের তারটিয়া পালপাড়ায় দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরিতে আবার কেউবা রং করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
সুমন পাল নামের এক প্রতিমাশিল্পী বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন রকম পরিবেশ চলছে। এ কারণে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে। গতবছর ১০টা মণ্ডপের কাজ করেছি। এবার ছয়টি বানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতেই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি।
আরেক প্রতিমাশিল্পী গোবিন্দ পাল বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার রঙের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমাগুলোকে অলংকার দিয়ে সাজিয়ে পূজারিদের বুঝিয়ে দেবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫০০- ৬৫০ টাকায় কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেতো। এখন ৫-৬ হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা, এখন সেই প্রতিমা তৈরিতে খরচ হয় লাখ টাকার ওপরে।’
প্রতিমাশিল্পী সন্তোষ পাল বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় আমি এই মৃৎশিল্পের কারিগর। আমার বাপ-দাদারা এই কাজ করে গেছেন। এই কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজও তেমন পারি না।’
তিনি বলেন, ‘গতবছর ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। এবার পরিস্থিতি তেমন ভালো না দেখে ছয়টি তৈরি করেছি। ভয়ে ছিলাম এবার পূজা হবে কি না।’
‘প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত এক বস্তা মাটির (৫০ কেজি) দাম দুই হাজার টাকা। সঙ্গে পরিবহন খরচ আছে। অথচ আমাদের পারিশ্রমিক কিন্তু বাড়েনি’, বলেন প্রতিমাশিল্পী সজীব পাল।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গুণ ঝন্টু। তিনি বলেন, পূজা উদযাপন কমিটি ও সর্বদলীয় লোকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের দুর্গা উৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে আশা করি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো। আশা করি, শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপিত হবে।
আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা। আজ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।
আরিফ উর রহমান টগর/এসআর/জিকেএস