আশুলিয়ায় ৪৮ ঘণ্টায়ও সরেননি শ্রমিকরা, সড়কে আটকে আছে যান
৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় হলেও ঢাকার আশুলিয়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক থেকে সরেননি বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। তাদের অবরোধের ফলে সড়কটির দুই পাশ স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে এ পথের যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে নবীনগর থেকে বাইপাইল হয়ে কবিরপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে চন্দ্রামুখী সড়কে নবীনগর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ও ঢাকামুখী লেনে কবিরপুর থেকে বাইপাইল ১০ কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ও আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল সড়কেও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে মহাসড়কের বাইপাইল পয়েন্টে উভয় লেনেই অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। রাতেও তারা সড়কে ছিলেন। পরদিন মঙ্গলবার সড়ক থেকে সরেননি। সবশেষ বুধবারও তারা সড়কে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই মহাসড়কে কর্মব্যস্ততা বাড়তে থাকে। তবে সড়ক অবরোধের কারণে এ এলাকায় আসা যানবাহন ও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অবরোধের কারণে নবীনগর ত্রি মোড়কে কেন্দ্র করে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশাপাশি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও জট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচামুখী সড়কে প্রায় নবীনগর থেকে সাভারের দিকে ১০ কিলোমিটার ও ঢাকামুখী সড়কে নবীনগর থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার যানজট দেখা দিয়েছে।
শ্রমিকরা বলছেন, বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা বার্ডস আর এন আর ফ্যাশন্স লিমিটেড, বার্ডস গার্মেন্টস, বার্ডস ফেডরেক্স ও বার্ডস এ অ্যান্ড জেড লিমিটেড পাওনাদি পরিশোধ না করে বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে এসব কারখানার প্রায় দুই হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বার্ডস গ্রুপের একাধিক শ্রমিক বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর আমাদের সব পাওনাদি পরিশোধ করার কথা ছিল। এরমধ্যে তিন মাসের সময় নিয়ে তারা নোটিশ টানিয়ে দেন যে পাওনাদি তিন মাস পর পরিশোধ করা হবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কীভাবে মালিকপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়? আমাদের সার্ভিস বেনিফিট, ছুটির টাকা, অন্য কোনো বকেয়া থাকলে সেগুলো ৩০ সেপ্টেম্বর দেওয়ার কথা ছিল।
তারা আরও বলেন, হঠাৎ করে রানিং ফ্যাক্টরি লে-অফের নোটিশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। এক বছরের ওপরে যাদের চাকরির বয়স তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, কিন্তু যাদের চাকরির বয়স এক বছরের কম তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলছে।
বার্ডস গ্রুপের কারখানাগুলো বাইপাইল বুড়ির বাজার এলাকায় অবস্থিত। এই কারখানাগুলো ২৮ আগস্ট থেকে লে-অফ ঘোষণা করে। পরে শ্রমিকরা লে-অফে থাকতে রাজি না হলে পরবর্তীতে কারখানা ১২৪ (ক) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, গতকাল থেকে বাইপাইলে একই অবস্থা। সড়কে যান চলাচল বন্ধ। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অ্যাকশনে গেলেও তো অন্য সমস্যা। আমরা কি করতে পারি?
ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহীনুর কবির বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে সড়ক তারা আটকে রেখেছে। এর কারণে ঢাকা থেকে যেসব গাড়ি উত্তরবঙ্গ ও খুলনার দিকে যায় সব রাস্তাই বন্ধ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। ধামরাই রোডেও যানজট, নবীনগর বাইপাইল বন্ধ। মোটকথা এ অঞ্চলের সব সড়কে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এভাবে মূল সড়ক তারা বন্ধ রাখতে পারে না। তাদের কাউন্সিলিং করা হয়েছে, কিন্তু তারা মানেননি।
তিনি বলেন, আমরা সমাধানের অনেক চেষ্টা করেছি। মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। মালিক বলেছেন, তার কাছে কোনো টাকা নেই। কারখানা বিক্রি করে টাকা দেবেন। শ্রমিকদেরও কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে। তবে আর সব কারখানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।
মাহফুজুর রহমান নিপু/জেডএইচ/এএসএম