অবশেষে রক্ষা হলো বগুড়ার ঐতিহাসিক নবাববাড়ি


প্রকাশিত: ১১:০৫ এএম, ০৫ মে ২০১৬

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বিক্রি হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি (নবাব প্যালেস) অবশেষে রক্ষা হলো। সম্প্রতি ঐতিহাসিক এই বাড়িটি প্রায় ৩০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও তার দুই সহযোগী। গোপনে বাড়িটির দলিল সম্পাদনের মাত্র দুই দিনের মাথায় সরকার সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছানিয়া আক্তার স্বাক্ষরিত এই পত্রটি বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা প্রশাসকের হাতে গিয়ে পৌঁছে।

বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্র জানায়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরীরর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকায় সরকার বাড়িটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নবাববাড়ির (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরীরর স্মৃতি বিজরিত বাড়ি) ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকায় ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইন (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় সরকার উল্লেখিত বাড়িটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আর এ লক্ষ্যে বর্ণিত পুরার্কীতিটি সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি জারি ও পরবর্তী গেজেটে তা প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বেশ আগে থেকেই বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি (নবাব প্যালেস) কিনতে একটি মহল দীর্ঘদিন যাবৎ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ায় বগুড়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই তৎপরতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা হয়নি।

বগুড়ার তিনজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ১ একর ৫৫ শতক জমি ও স্থাপনা কিনে নেন ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকায়। দলিল খরচসহ যার দাম পড়ে যায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ওয়াকফ সম্পত্তি হবার পরেও আর এই সম্পত্তি বিক্রি করেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলীর দুই ছেলে সৈয়দ হাম্মাদ আলী চৌধুরী ও সৈয়দ হামদে আলী চৌধুরী।

বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ১৫ এপ্রিল শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকায় গোপন দলিল সম্পাদনের পর বগুড়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত ১৭ এপ্রিল নবাববাড়ি বিক্রির দলিল সম্পাদন হয়। এরপর দিন থেকেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নবাববাড়ি বিক্রির সংবাদ প্রকাশ হয়।

পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। তারা নবাববাড়িটি সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেন। শেষ পর্যন্ত নবাববাড়িটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বগুড়া শহরের সূত্রাপুর মৌজার ১৭০৮নং দাগে অবস্থিত নবাববাড়ির মোট সম্পত্তির পরিমাণ তিন একর ৭৫ শতক বা প্রায় ১০ বিঘা। এর বেশির ভাগ সম্পত্তি অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এই সম্পত্তির উপর ক্রেতারা গড়ে তুলেছেন আল আমিন কমপ্লেক্স, টিএমএসএস মহিলা মার্কেট, শরীফ উদ্দিন সুপার মার্কেট, র্যাংগস ও বহুতল বাণিজ্যিক ভবন রানার প্লাজা।
সর্বশেষ এক একর ৫৫ শতক জমির উপর ছিল মোহাম্মাদ আলী ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের কবরসহ নবাববাড়ি। ১৮৮৪ সালে নবাব বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

সরকারি মূল্য হিসেবে সাধারণ বাড়ির মূল্য বসিয়ে স্থাপনাসহ ঐতিহাসিক এই বাড়ি করা হয় বিক্রি হয়েছিল ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকায়। এটা কিনেছিলেন যৌথভাবে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন, ব্যবসায়ী শফিকুল হাসান জুয়েল ও  আলহাজ্ব আব্দুল গফুর।

এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।