গাজীপুরে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের নামে মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিহত ইসরাফিল ও পাশে তার স্বজনদের কান্নার ছবি

গাজীপুরের শ্রীপুরে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেতাসহ সাতজনের নামে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত যুবকের বাবা মো. নাছির বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেন। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- শৈলাট মেডিকেল মোড়ের গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে কামরুল হাসান লিটন (৫০), একই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে বাবুল মন্ডল (৪৫), মৃত টেপপাঞ্জুর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩২), মৃত তাজুম আলীর ছেলে মো. জলিল (৬৫), তার ছেলে সোহাগ (৪০), মৃত মগার ছেলে ইউসুফ (৪০), মৃত সুমেসর ছেলে ছাত্তার (৫৫)। কামরুল হাসান লিটন উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

নিহতের স্বজনরা জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর ঘুমিয়ে ছিলেন ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্থানীয় ব্যাপারীবাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চান। পরে তাকে নিয়ে যায় শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে নিয়ে তার হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা হয়। তারপর চলে ব্যাটারি চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। পরে কোমরের নিচে ঢেলে দেওয়া হয় গরম পানি।

নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায় আসামিরা। পরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে ছেলেকে কয়েক ঘণ্টা পেটায়। এক পর্যায়ে তারা চায়ের দোকান থেকে গরম পানি নিয়ে আমার ছেলের ওপর ঢেলে দেয়। এতে কোমরের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পড়ে যায়। এসময় আমার ছেলে পানি পান করতে চেয়েছিল, তার জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু তারা পানি খেতে দেয়নি। আমরা এত চেষ্টা করেছি তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতো।

নিহতের শতবর্ষী দাদী মহর জান বলেন, আমার নাতীকে বাড়ি থেকে স্কুল মাঠে ডেকে নিয়ে সকাল ৮ থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ধরে নির্যাতন করে। আমি কতবার যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ওরা আমাকে বারবারই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

নিহত ইসরাফিলের চাচা আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, মারধরের পর একটি ভ্যানে তুলে ইসরাফিলকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় থাকার তিনদিন পর আমার ভাতিজাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ১৬ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান ইসরাফিল।

মারা যাওয়ার পরপরই অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেয়। কামরুল হাসান লিটনের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ইসরাফিলের ওপর চালানো নির্যাতন সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি। নির্যাতনের শিকার ইসরাফিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা গেছে। তবে এ ঘটনায় কামরুল হাসান লিটন আমাকে কিছুই জানায়নি।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাক আহমেদ জানান, ইসরাফিল নামে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

মো. আমিনুল ইসলাম/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।