মিরসরাই

গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে খামারিরা

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তীব্র গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা। উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার গবাদি পশুর খাদ্য সংকট রয়েছে খামারিদের +দাবি।

গত ২১ আগস্ট থেকে ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় এ উপজেলার ১১ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে দুই লাখ মানুষ। বন্যায় গরু, মহিষ, ছাগলসহ শতাধিক পশু মারা গেছে। পচে গেছে ১০০ টন শুকনো ঘাস ও ৫০ একর জমিতে চাষ করা নেপিয়ার ঘাস। খাদ্যের অভাবে অনেক পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গবাদি পশুর সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক খামারি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালাসহ ১১ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব এলাকায় ১০দিন ধরে গলাসমান পানি থাকায় শুকনো সব খড়ের গাদা পচে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন খামারি চাষ করা প্রায় ৫০ একর জমির ঘাসও পচে গেছে।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের কৃষক ভুট্টু বলেন, এবারের বন্যায় পানি যেমন উঠছে তেমনি আবার পানি দীর্ঘদিন থাকায় গরুর ঘাস পচে গেছে। দুই কিলোমিটার দূরে রেললাইনের আশেপাশে থেকে কিছুটা নিয়ে এসে কিছুটা চাহিদা মিটছে।

গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে খামারিরা

গরুর খামারি আনোয়ার ডেইরি এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার বলেন, আমার খামারে অর্ধশত গরু রয়েছে। এসব গরুর জন্য প্রায় দুই একর জমিতে ঘাসের চাষ করা হয়েছে। এবারের বন্যায় পানির নিচে সব ঘাস পচে গেছে। এখন গরুর খাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছি।

উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার এলাকার কৃষক জানে আলম বলেন, অভাবের সংসারে কষ্ট করে হলেও দুটি গরু পালন করে আসছিলাম। জমিতে গরু খাবার প্রস্তুত হতো। বন্যায় পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে সব ঘাস পচে গেছে। এখন আশপাশে ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না, দু কিলোমিটার দূরে থেকে গরুর জন্য ঘাস সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

আজমনগর এলাকার ইকবাল হোসেন জানান, বন্যার পানিতে বেশিরভাগ গো-চারণভূমি তলিয়ে গেছে। বন্যায় গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় বাজার থেকে চড়া মূল্যে শুকনো খাবার কিনে গবাদিপশু পালনের ক্ষমতা অনেকের নেই। সে কারণে প্রতিদিন নিজেদের খাবার না জুটলেও গবাদিপশুর খাদ্য জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান ইকবাল।

গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে খামারিরা

জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক মো. শিপন বলেন, একটা গাভী ও একটা বাচুর লালন পালন করেছি। বন্যার কারণে সব শুকনো খাওয়ার নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো মতো ভাতের মাড় ও অল্প কিছু ভুসি মিশিয়ে খাওয়াচ্ছি। কিন্তু কাঁচা খাদ্য না থাকায় দিন দিন গরু শুকিয়ে যাচ্ছে।

মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ছোট বড় প্রায় ২০০ ডেইরি খামার রয়েছে। এবারের বন্যায় প্রায় সব খামারি চাষ করা ঘাস পচে গেছে।

মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ জানান, আগস্ট মাসের বন্যায় উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ১০০ টন শুকনো খাওয়ার ও ৫০ একরের কাঁচা ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলায় ৯৭ হাজার গবাদি পশু রয়েছে। এরমধ্যে ২৮ হাজার পশুর খাদ্য সংকট রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ইউনিয়নের খামারি ও কৃষকদের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় গবাদিপশুর বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার গবাদিপশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার গবাদিপশুর টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এম মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।