বৃষ্টির পানিতে ডুবতে বসেছে কৃষকের স্বপ্ন
পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে যেদিকে চোখ যায় মাঠজুড়ে চোখে পড়বে শিমের ক্ষেত। শিমের সবুজ লতা-পাতার মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারো নজর কাড়বে। এবার আগাম শিমে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষকরা। কিন্তু টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে কৃষকের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শত শত হেক্টর শিমের জমি এখন পানির নিচে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১৪০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ হয়েছে। আগাম জাতের শিম বাজার উঠতে শুরু করেছে। আর শীতকালীন শিমসহ অন্যান্য সবজি চাষের জন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা গ্রামের শিম চাষি আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, বাঘহাছলা গ্রামের বেশিরভাগ কৃষি জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ করা হয়েছে। শিমের ফলন শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে হঠাৎ চারদিনের টানা বৃষ্টিতে গ্রামের অধিকাংশ শিমের জমি তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে শিম গাছের গোড়া পানির নিচে রয়েছে। দুই থেকে তিন দিন পানির নিচে থাকলে সাধারণত শিম গাছ মরে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি এখনো প্রতিটি শিমক্ষেতে জমে আছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে অধিকাংশ শিম গাছ পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কৃষকরা এবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শেখপাড়া গ্রামের শিমচাষি আনারুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমির শিম গাছের গোড়া পুরোটাই এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশনের তেমন ব্যবস্থা নেই। পানি আর দুই একদিন থাকলেই গাছের গোড়া পচে যাবে। তিন বিঘা জমি চাষ করতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সবেমাত্র গাছে শিম আসা শুরু হয়েছে। এক মণের মতো বিক্রি করেছি। এ অবস্থায় শিমক্ষেত নষ্ট হয়ে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো।
মুলাডুলি ইউনিয়নের উপ-কৃষি কর্মকর্তা রোমানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, এই ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের কৃষি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানকার শিম ক্ষেতগুলো এখন পানির নিচে। শুধু গোয়ালবাথান নয়, আশপাশের প্রতিটি গ্রামেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ইউনিয়নের মাঝদিয়ে বয়ে যাওয়া কমলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলেই এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে এখানকার শত শত হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়ন শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এ ইউনিয়নে প্রায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে প্রতি বছর শিমের আবাদ হয়। এবার আগাম জাতের শিমের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। সম্প্রতি প্রবল বর্ষার কারণে শিমের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না রাখায় জলাবদ্ধতার কারণে শিমক্ষেত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সাধারণত তিন থেকে চার দিন শিম গাছের গোড়া পানির নিচে থাকলে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। গাছের গোড়া থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর দ্রুত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নানান পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ মহসীন/এফএ/জিকেএস