বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ডাক্তারের অভাবে চালু হয়নি এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং স্থাপন

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন ফরিদপুর
প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে ৭ বছরেও শুরু হয়নি এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং স্থাপনের চিকিৎসা। হার্টের রোগীর পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার জন্য সিসিইউ, আইসিইউ, ক্যাথল্যাবসহ প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা থাকলেও শুধু একজন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান না থাকায় হাসপাতালটিতে দীর্ঘ ৭ বছরেও শুরু হয়নি এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং স্থাপনের চিকিৎসা।

এনজিওগ্রাম হচ্ছে একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে হার্টের নিজস্ব রক্তনালীর প্রবাহে কোনো বাধা/ব্লক আছে কি না তা নিশ্চিত করা হয়। এনজিওগ্রামের রিপোর্টে ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত বা ব্লক হওয়ার তথ্য জানা গেলে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া সচল রাখতে এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে স্টেন্ট বা করোনারি স্টেন্ট পরানো হয়। প্রচলিত ভাষায় এটি রিং হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেখানে এনজিওগ্রাম করাতে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয় সেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ পরীক্ষা করতে বাড়তি অনেক টাকা লাগে। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন এনজিওগ্রাম ও সুবিধা নিতে খরচ লাগে ১৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ফরিদপুরসহ অত্রাঞ্চলে সরকারি হাসপাতালে এই এনজিওগ্রাম চালু না থাকায় রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার হাজার হাজার দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা সরকারিভাবে হার্টের উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এদিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার ভবন আর অর্ধশত কোটি টাকার চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে না বছরের পর বছর। বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থেকে অনেক মালামাল নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তবে এগুলো নিয়ে কারো যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সেসময় বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারিতে কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজ। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাজ্জাদ মুন্সীর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ক্যাথল্যাব, ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মূল্যের এমআরআই মেশিন, ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, রেডিও থেরাপি মেশিনসহ অর্ধশত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রোগীদের কোনো কাজে আসছে না।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হার্টের সমস্যা নিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা এনজিওগ্রাম বা হার্টে রিং স্থাপন করতে পারছেন না। যারা সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন তাদের আশপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ক্লিনিকি ও হাসপাতালগুলোতে অধিক টাকায় সেবা নিতে হয়। কেউ কেউ অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ফলে বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। অথচ সরকারিভাবে এই সেবা চালু করা গেলে স্বল্প খরচে রোগীরা সেবা নিতে পারতেন।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থেকে আগত এক রোগীর স্বজন মিজানুর মোল্লা বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা এনজিওগ্রাম বা হার্টে রিং স্থাপন করতে পারছেন না। হাসপাতালটিতে এর কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে রোগীদের চরম ভোগান্তি ও বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। বাইরে থেকে এনজিওগ্রাম ও সুবিধা নিতে খরচ লাগে ১৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ফরিদপুর শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তারেক আইয়ুব খান বলেন, এজন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলা। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে সুবিধা দিতেই এভাবে যন্ত্রপাতির সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সেখানে এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং প্রতিস্থাপন বন্ধ কি না সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। শূন্যপদ গুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলেও তিনি মনে করেন।

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামালউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমাদের হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, রেজিস্ট্রার, সহকারীসহ বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান হলেই আমরা আমাদের হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপনের মতো উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে পারবো।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুমায়ূন কবিরকে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।