মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বকেয়া পরিশোধ না করায় ‘তালাবন্দি’ একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
তালাবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স

নেত্রকোনার মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। তাও জ্বালানি সংকটে একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে মুমূর্ষু রোগী ও স্বজনরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দূরবর্তী হাসপাতালে যাতায়াত করতে হচ্ছে রোগীদের। এতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় অকটেন। জ্বালানি তেল সরবরাহ করে নেত্রকোনা জেলা শহরের মোনাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (তেল পাম্প) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে গত এক বছরে জ্বালানি বাবদ মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া রয়েছে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

টাকা পরিশোধ না করায় গত ২ আগস্ট থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে মোনাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। একটিমাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্স তেলের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে যান মদন উপজেলার রোগীরা। সরকারি নিয়মানুযায়ী মদন থেকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে যেতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ৬০০ টাকা। আর মদন থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ভাড়া এক হাজার ৪৬০ টাকা। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকায় রোগীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ বেশি। প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সেগুলো মদন থেকে নেত্রকোনায় ভাড়া নিচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর মদন থেকে ময়মনসিংহে যেতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এতে রোগী ও স্বজনরা পড়েছেন বিপাকে।

এছাড়া পাশের উপজেলা খালিয়াজুরীর রোগী ও আটপাড়া উপজেলার দুটি ইউনিয়নের রোগীরা মদন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটির ওপর নির্ভরশীল। তাই অন্য উপজেলার তুলনায় মদনের জ্বালানি খরচও বেশি।

উপজেলার ধুবাওয়ালা গ্রামের বাসিন্দা শামীম মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। মদন হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ডাক্তার বলেছে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ। এখন বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিলে চার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে।’

মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক আবুল হুসাইন মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনেই রোগীর লোকজন আমাকে ফোন দেয় রোগী নিয়ে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য। কিন্তু পাম্পে বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই একমাসের বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালানো বন্ধ রয়েছে।’

কথা হয় নেত্রকোনার মোনাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতিনিধি মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের তেল বাবাদ ১৩ লাখ টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায় না। বকেয়া পরিশোধ না করায় মালিকের নির্দেশে তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’

এ বিষয়ে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান বলেন, ‘১৫ লাখ টাকার বেশি বকেয়া ছিল। চাহিদা পাঠিয়ে যোগাযোগ করায় সাত লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে অ্যাকাউন্স অফিসের কর্মবিরতির কারণে এখনো বিল পাস হয়নি। আগামী মঙ্গল অথবা বুধবারের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স চালু হবে বলে আশা করছি। বাকি টাকার জন্যও অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগে যোগাযোগ করা হবে।’

এইচ এম কামাল/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।