আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ইকবাল হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার মৌটুপী গ্রামের সরকার বাড়ি ও কর্তাবাড়ির লোকজনের মধ্য এই সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে যারা আহত হয়েছেন তারা হলেন- লাদেন (২০), সাফিউদ্দিন (৬৫), হোসাইন (২০), ইয়াসিন (২৫), রাকিব (৩২), শাহ আলম (২৫), তোফাজ্জল (৩৫) ও হেলেনা বেগম (৩৪)। তারা ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৌটুপী গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে সরকার বাড়ি ও কর্তাবাড়ির সমর্থকদের মধ্য কলোহ লেগে আছে। স্বাধীনতার পর থেকে দুই বংশের ঝগড়া ও শত্রুতা চলছে। যার কারণে কিছুদিন পর পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্য সংঘর্ষ হয়।
এ পর্যন্ত মৌটুপী গ্রামের দুই বংশের সংঘর্ষের ঘটনায় ১০-১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক মাস আগে দুই বংশের সংঘর্ষের ঘটনায় কর্তাবাড়ির নাদিম কর্তা নামে এক যুবক নিহত হন। তার মৃত্যুর পর থেকে মৌটুপী গ্রামে দুপক্ষের মধ্য প্রায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করে দুপক্ষের লোকজন দেশীয় অন্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় ইকবাল হোসেন নামে এক যুবক বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্য কমপক্ষে অর্ধশত মামলা চলমান। গত ঈদের পরের দিন কর্তাবাড়ির বংশের নাদিম সরকার (৫৫) সরকার বাড়ির লোকজনের হাতে নিহত হলে মামলা হয়। পরে মামলায় ৮৩ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে ৬৯ জন কিশোরগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিলে বিচারক সবাইকে কারাগারে পাঠান। গত কয়েকদিন আগে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আজ সংঘর্ষে নেমে পড়েন।
সরকার বাড়ির আনোয়ারুল হক ও আঙ্গুর মিয়া জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আজ কর্তাবাড়ির নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হকের নির্দেশে এই সংঘর্ষ হয়। এতে আমাদের ইকবাল মারা যান।
এ বিষয়ে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সরকার বাড়ির সাফায়েত উল্লাহ বলেন, গত ঈদের পরদিন সংঘর্ষে কর্তা বাড়ির নাদিম নিহত হলে তাদের বংশীয় লোকজন আমার বংশের শতাধিক বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করে। খুনের ঘটনায় আমাদের লোকজন পলাতক ছিল দেড়মাস। এখন তারা জামিনে এলেও বাড়িতে উঠতে বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়।
কর্তাবাড়ির নেতা সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, আমি বাড়ি থাকি না। গত ঈদের পরদিন আমার বংশের নাদিমকে সরকার বাড়ির লোকজন হত্যা করে। দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে তাদের সঙ্গে। এখন তারা নাদিম হত্যার মামলায় জামিন পেয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালাতে কদিন ধরে চেষ্টা করছিল। আজও তারা হামলা চালালে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়। শুনেছি সরকার বাড়ির একজন মারা গেছে। তবে আজকের ঘটনায় আমার বংশের ২০-৩০ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.ফারিয়া নাজমুন প্রভা বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। তার বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মৌটুপি গ্রামের মানুষ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে সংঘর্ষ করে আসছেন। তারই জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় এক যুবক নিহত হলো। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজীবুল হাসান/জেডএইচ/এএসএম