কমিউনিটি ক্লিনিক

২৭ ধরনের ওষুধের কথা থাকলেও মেলে এক প্রকার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কাগজে-কলমে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকার কথা থাকলেও এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নীলফামারীতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও দু’এক প্রকার ওষুধ পাওয়া যায় এখানে। এতে ক্ষুব্ধ সেবা গ্রহীতারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলার ছয় উপজেলায় ৬১টি ইউনিয়ন রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৯৭টি। এতে কর্মরত সিএইচসিপির সদস্য ১৯৪ জন এবং জেলার এইচএ ১৮৩ পদের মধ্যে রয়েছেন ৯৩ জন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের সপ্তাহে ৬ দিন দায়িত্ব পালন করার কথা। এর সঙ্গে ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য সহকারীদের ৩ দিন এবং পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের (এফডব্লিউএ) ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসে সেবা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসাবে প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে দুজনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যায় শুধু সিএইচসিপিদের।

এসব ক্লিনিকে তিন মাসের জন্য প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, অ্যান্টাসিড, হিস্টাসিন, খাওয়ার স্যালাইনসহ ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়।

দক্ষিণ চওড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের বাসিন্দা বিলকিছ বেগম অভিযোগ করে জানান, ডাক্তার ঠিকমতো ওষুধ দেয় না। নিয়মিত ক্লিনিকে আসে না। বেলা ১১টায় আসলেও দুপুর ১টার আগেই চলে যায়। রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও করেন তিনি।

২৭ ধরনের কথা থাকলে ওষুধ মেলে এক প্রকার

কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা হাজেরা বেগম বলেন, ‘নামেই ক্লিনিক। প্রয়োজনের সময় সেবা পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময়ই থাকে বন্ধ। ২৭ ধরনের ওষুধের কথা বলা হলেও দুই এক প্রকার ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। প্রতিজনের কাছ থেকে ওষধ দেওয়ার জন্য ৫ থেকে ১০ টাকা নেন। টাকা না দিলে তিনি ওষুধ দেন না।’

রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মাঝে মধ্যে ওষুধ নিতে আসি। আসলেই বলে ওষুধ নাই, শেষ হইয়া গেছে। তাহলে ওষুধ দেয় কারে?’

কুড়িগ্রামপাড়া গ্রামের মমিনুর ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি ক্লিনিকে দুদিন গেছি ওষুধ নিতে, কিন্তু আমাকে ওষুধ দেয়নি। এখানে যারা ওনার পরিচিত তাদের ওষুধ দেন, বাকিদের অনেককে ফিরত দেন।

জানতে চাইলে দক্ষিণ চওড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপি রত্না রানী রায় জাগো নিউজকে বলেন, এখানে প্রতিদিন ৪০-৫০ রোগী আসে, কোনোদিন আবার ২৫-৩০ জন আসে। সব রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। আমাদের সকাল ৯টায় আসার কথা, তবে আজ আসতে দেরি হয়েছে। বিকেল ২-৩টা পর্যন্ত থাকি।

২৭ ধরনের কথা থাকলে ওষুধ মেলে এক প্রকার

রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, রোগীর কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয় সেটি ক্লিনিকের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়। স্যার আমাকে নিতে বলেছে তাই নিই। টাকা আবার অনেকেই দেন না।

সুখধন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শ্যামল চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর, আমাশয়, পাতলা পায়খানা এবং প্রসূতিদের চেকআপ ও আয়রণ ওষুধ দিই। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ক্লিনিকে ২৭ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়। আমি সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকে থাকি। তবে অনেক সময় ওষুধ শেষ হওয়ার কারণে দু’একদিন কম দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সেবা গ্রহীতাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো আমরা তদারকি করবো। এছাড়া প্রতি মাসে আমরা ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করছি। গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।

ইব্রাহিম সুজন/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।