মায়ের কোলে ফিরলো সেই শিশু, বিক্রির বিষয়টি সঠিক নয়
দিনাজপুরে গুলিবিদ্ধ স্বামীর চিকিৎসার খরচ মেটাতে সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার সংবাদটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন রোকেয়া বেগম। তিনি বলেছেন, ‘একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আসলে আমরা সন্তান বিক্রি করিনি। আমাদের অনিশ্চিত জীবনে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সন্তানহীন আত্মীয়ের হাতে কোলের শিশুকে তুলে দিয়েছিলাম’। একইসঙ্গে সন্তানকে ফিরেও পেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের রাজবাড়ী কাটাপাড়ায় আশ্রিত বাড়িতে বিষয়টি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ ও রোকেয়া বেগম দম্পতি।
এরআগে সোমাবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় বিক্রি করা শিশুটিকে কুড়িগ্রাম থেকে নিয়ে এসে বাবা-মায়ের কোলে তুলে দেন ছাত্ররা।
শিশুটির মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি সন্তান বিক্রি করিনি। আমাদের অনিশ্চিত জীবনে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সন্তানহীন এক আত্মীয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলাম কোলের শিশুকে। তারা মানবিক কারণে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিতে ছড়িয়ে পড়ে আমরা সন্তান বিক্রি করেছি। এতে প্রশাসন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাই চাপের মধ্যে পড়ে যায়। তবে ছাত্ররা যদি আগে জানতো তাহলে চিকিৎসার কোনো সমস্যা হতো না।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি কিন্তু ওই আত্মীয়ের জন্যও কষ্ট হচ্ছে। কারণ তারা এক মাস ধরে আমার সন্তানকে পরম যত্নে লালন -পালন করেছেন। আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে তারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন।’
গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সন্তানটির জন্ম হয়। তখন আমার স্ত্রী আমার, আমার মেয়ে ও আমার মায়ের সেবাযত্ন কীভাবে করবে, পরিবার কীভাবে চলবে, সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানটির বা কী হবে—এই ভেবে সন্তানহীন এক আত্মীয়ের কাছে সন্তানটিকে তুলে দেই। পরে তারা আমাদের ২৫ হাজার টাকা সহায়তা করেছে। আর এটাই ছড়িয়ে যায় ২৫ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করেছি।’
এরআগে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালে চেকআপের জন্য নিয়ে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হন দিনমজুর আব্দুর রশিদ।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন বলেন, প্রশাসনিক সহযোগিতায় শিশুটিকে কুড়িগ্রাম থেকে এনে বাবা-মায়ের কোলে তুলে দিয়েছেন ছাত্ররা। জেলা প্রশাসক, সদর ইউএনও এবং এসিল্যান্ড বিষয়টি তদারকি করছেন। পরিবারটিকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
এমদাদুল হক মিলন/এসআর/এমএস