‘৭ দিনের মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো’ প্রশ্ন মাসুদের স্ত্রীর

সোহান মাহমুদ সোহান মাহমুদ , চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:৩৮ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাসুদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে শোকের মাতম। অঝরে কাঁদছেন মা তাসেনুর বেগম (৫৫)। পাশে ৭ দিনের শিশু সন্তান কোলে নিস্তব্ধ বসে আছেন স্ত্রী বিউটিয়ারা খাতুন (৩১)।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলার শিবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের খাষেরহাট এলাকায় আল মাসুদের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এলাকাবাসী বলছেন, ছেলে হিসেবে খুবই ভালো ছিলেন মাসুদ। বাড়িতে এলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। কিন্তু ২০১৪ সালে দুর্বৃত্তদের হামলায় পা হারানোর পর তেমন বাড়িতে আসতেন না তিনি। কারণ মাসুদ অনেকটা পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন।

মাসুদের ভাই আয়াতুল্লাহ বেহেস্তি জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এ সময় মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাঁ পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল তার হাতের রগ। ওই হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। সে সময় থেকে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন আমার ভাই।

পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের স্টোর কিপারের চাকরি হয় মাসুদের। ২০২৩ সালে বিয়েও করেছেন। হামলার মাত্র ৫ দিন আগে একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে ভাইয়ের। ৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন মাসুদ। এ সময় বিনোদপুরে তার অন্য পা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা।

তিনি আরও বলেন, আমার পঙ্গু ভাইকে অমানবিকভাবে মারা হয়েছে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে এক গ্লাস পানি চেয়েছিলেন আমার ভাই। কিন্তু তাও দেওয়া হয়নি তাকে। এ কেমন অমানবিকতা। একটি ভিডিওতে আমরা দেখলাম আমার ভাই বলছেন, ‘আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগটগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি।’

‘৭ দিনের মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো’ প্রশ্ন মাসুদের স্ত্রীর

মাসুদের স্ত্রী বিউটিয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ২০১৪ সালের আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতেন না। কারণ সে এক কথায় বলা যায় অচল মানুষ। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। এমনকি তার প্যান্টের জিপার আমাকে লাগিয়ে দিতে হয়। এমন পঙ্গু মানুষকে যারা হত্যা করেছে, আমাকে যারা নিঃস্ব করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘৭ দিন আগেই আমার মেয়ের জন্ম হয়েছে। আমার স্বামী নাম পছন্দ করে রেখে গেছেন মাসুমা। এই ৭ দিনের মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো? কী খাবো, কোথায় থাকবো? আমার শেষ সম্বলটুকু আর থাকলো না।’

মাসুদের মা তাসেনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে প্রায় ১০ বছর আগে। আমার সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস ছিল ছেলে মাসুদ। কিন্তু সে আর পৃথিবীতে নেই। এটা বিশ্বাস করতে পারছি না না। এখন আমার পরিবারের কী হবে? আমার পঙ্গু ছেলেকে কেন এভাবে মারতে হলো?

৭ সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় মারা যান মাসুদ। ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মাসুদের মরদেহ নিয়ে এসে পৌঁছালে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাসুদকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। একজন পঙ্গু মানুষের এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। তার পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।