ভুল চিকিৎসা
মৃত নবজাতককে রেফার্ড করার অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে ভর্তি করা হয় একদিন বয়সী এক নবজাতককে। তাকে চিকিৎসাও দিয়ে আসছিলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা। কিন্তু এক পর্যায়ে শিশুটি মারা যায়। তবে মারা যাওয়ার তথ্য গোপন রেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই নবজাতককে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে নবজাতকের স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌস জাহাঙ্গীরকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত নবজাতক যশোর শহরতলী নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার সাইফুল ইসলাম ও শান্তা ইসলাম দম্পতির সন্তান। গত ৭ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে শান্তা ইসলাম ওই সন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে স্বজনরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসকের পরামর্শে রোববার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতাল ও নবজাতকটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতেই শান্তা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর একটু অসুস্থ বোধ করলে নবজাতকটির স্বজনরা তাকে নিয়ে যশোর শহরে বেসরকারি কিংস হসপিটালে নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পলাশ কুমার পালকে দেখান। এ সময় তিনি নবজাতকের পরীক্ষা-নীরিক্ষা এবং আল্ট্রাসনো করেন। কিন্তু তেমন কোনো রোগ ধরা না পড়ায় সাধারণ নিউমোনিয়া উল্লেখ করে স্বজনদের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে রোববার রাতে নবজাতককে যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন তারা। এরপর থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ওই শিশুকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছিলেন।
নবজাতকের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক অনুরোধের পর ওইদিন রাতে ডাক্তার আফসার আলী এসে নবজাতককে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যান। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অবহেলার এক পর্যায়ে সোমবার ভোর ৫টার দিকে নবজাতকটির মৃত্যু হয়।
এদিকে খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশু চিকিৎসক আফসার আলী হাসপাতালে যান। নবজাতকের ব্যবস্থাপত্রে ভোর ৫টার দিকে রেফারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে স্বজনরা নবজাতককে খুলনায় নিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করেন চিকিৎসক। এছাড়া শিশু চিকিৎসক আফসার আলী রোগীর স্বজনদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
মৃত নবজাতকটির মা শান্তা ইসলামের অভিযোগ, শিশুর বয়স বিবেচনা না করে হাই অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ দেওয়ার কারণে তার বাচ্চা মারা গেছে। তার বাচ্চার মৃত্যুর পরে চিকিৎসক জীবিত বলে খুলনায় রেফার্ড করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কত কষ্ট করে ১০ মাস পেটে রেখে স্বপ্ন দেখেছি। আল্ট্রাসনো করে দেখি ছেলে সন্তান হবে। তারপর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে। এর মধ্যে বাচ্চা প্রসব হয়। বাড়িতে সবাই খুশি। কিন্তু অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে এনে বাচ্চাটি মারা গেছে। ডাক্তারা আমার বাচ্চাটিকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলেছে।’
নবজাতকটির বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এরা ডাক্তার না, কসাই! তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার সন্তানরে হারিয়েছি। ডাক্তাররা তাদের দায় দায়িত্ব এড়াতে অন্যত্র রেফার্ড করেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার এই করুণ দশা এসব চিচিৎসকের কারণে। এই অপচিকিৎসা ও নবজাতক হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর রশিদ বলেন, নবজাতক শিশুকে মৃত অবস্থায় খুলনায় রেফার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন নবজাতকের স্বজনরা। এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
মিলন রহমান/এফএ/জেআইএম