জমা পড়েনি ছাত্র-জনতাকে প্রকাশ্যে গুলি করা টিপুর অস্ত্র

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৩:০৪ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর সাবেক যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর একাধিক ভিডিও ভাইরাল ফেসবুকে। পৃথক দুটি হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ৪ আগস্টের পর থেকে তিনি কোথায় আছেন জানেন না কেউই। তার পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ নেই।

এরমধ্যে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও টিপু তার অস্ত্র জমা দেননি। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

টিপু লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি আলোচিত লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, মঙ্গলবার অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। বিভিন্ন সময় এ জেলার ৩৩টি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা পড়েছে। কিন্তু শেষদিন রাত ১২টা পর্যন্ত টিপু অস্ত্র জমা দেননি।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জে এম শাখার তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে জেলা প্রশাসক ব্যক্তিমালিকানার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করে ৩৫টি। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। আলাউদ্দিন দিদার নামে এক ব্যক্তি লাইসেন্স নিলেও তিনি অস্ত্র ক্রয় করেননি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ২৭ জনের নামে লাইসেন্সকৃত ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে।

এসব অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ১৫টি, শটগান ১৬টি, বন্দুক একটি ও রাইফেল একটি রয়েছে। জমা পড়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের একটি ও রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আ ক ম রুহুল আমিনের দুটি অস্ত্র রয়েছে।

পদধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকুর দুটি, সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলামের একটি, সহ-সভাপতি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দুটি, রামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর দুটি, জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বায়েজীদ ভূঁইয়া দুটি, কমলনগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী দুটি, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া একটি, রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনির হোসেন চৌধুরী একটি ও রায়পুরের আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল বাকীন ভূঁইয়া একটি অস্ত্র জমা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে হামলা-সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওইদিন প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে যুবলীগ নেতা টিপুসহ তার লোকজন ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। সেদিন ৪ শিক্ষার্থী গুলিতে নিহত হয়। এছাড়া আরও ৮ জন পিটুনি ও সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান।

১৪ আগস্ট রাতে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আল আসাদ আফনান পাটওয়ারীর মা নাছিমা আক্তার ও নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন সদর মডেল থানায়। দুটি মামলাতেই টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া ৪ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ও কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের দায়েরকৃত ওই মামলাতেও টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা একটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এখন ওই অস্ত্রটি অবৈধ হয়ে গেছে। এ কারণে অস্ত্রের লাইসেন্সকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাজল কায়েস/জেডএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।