মেহেরপুর

জামায়াত নেতা তারিক হত্যায় মামলা, আসামি সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০৬:০১ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (ডানে) ও তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম

মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) হত্যাকাণ্ড এবং তার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিহতের ভাই তাওফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম শারমিন নাহারের আদালতে মামলা দুটি করেন।

নিহত তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ছমির উদ্দিনের বড় ছেলে।

তারিক হত্যা মামলায় সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ২০১৪ সালে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান, এএসপি আব্দুল জলিল, ওসি (ডিবি) বাবুল আক্তার, সদর থানার ওসি রিয়াজুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমিন মজুমদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ হোসেন, র্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন আশরাফ হোসেনসহ পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ২০-৩০ জনকে।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামকে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন এসপি নাহিদুল ইসলামের নির্দেশে মেহেরপুর শহরের ইসলামী ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যান। অজ্ঞাত স্থানে তাকে আটকে রেখে পরিবারের কাছে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ সুপার নাহিদুল ইসলাম ও সদর থানা পুলিশ। পরে ওইদিন রাত ১১টার দিকে বামনপাড়া শ্মশানঘাটে তারিকের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে বুক ও পেটে গুলি করে হত্যা করা হয়।

বিষয়টি তারিকের পরিবারকে অবহিত না করে মরদেহ মর্গে নিয়ে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন করে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেন আসামিরা। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবারের লোকজন দাবি করলেও তা দেয়নি পুলিশ। দাবি করলে সপরিবারে তাদের খুন করার হুমকি দেন আসামিরা।

মামলায় আরও বলা হয়, তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারির দায়িত্ব অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করে আসছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসনে তার এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা ছিল। তাই ভিন্নমত সমূলে বিনাশে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেন।

অপর মামলাটি করা হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জামায়াত নিধনের স্লোগান দিয়ে শহরে মিছিল বের করেন। মিছিলটি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার দোকান মেসার্স তাওহিদ অটোতে হামলা চালায়। দোকানের শাটার ভেঙে নগদ টাকা, মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আসামিরা দোকানের দোতলায় অবস্থিত তারিকের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন। এসময় কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করো হয় বাড়ির সামনে।

এ ঘটনায় করা মামলায় মেহেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী তাওফিকুল ইসলাম বলেন, অসহনীয় নির্যাতনের শিকার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে অসহায় সময় পার করেছেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। আসামিদের যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়, তাহলে আমাদের মতো আরও কোনো পরিবারের সন্তান হারাতে হবে না।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মারুফ আহম্মেদ বিজন জানান, বিরোধী মত দমনের অংশ হিসেবে নৃশংসভাবে তারিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য সদর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আসিফ ইকবাল/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।