টিকিট ছাড়া টাকা আদায়, ট্রেনের ৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত তিন রেল কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) পাবনার ঢালারচর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।
বরখাস্তকৃত রেল কর্মচারীরা হলেন- ট্রেন পরিচালক (গার্ড) মো. জাকারিয়া সোহাগ, টিকিট পর্যবেক্ষক (টিটিই) মো. গোলাম কিবরিয়া ও এটেনডেন্ট (পরিচালক) মো. গোলাম নবী মোল্লা।
রেল কর্মকর্তারা জানান, ঢালারচর ট্রেনে দায়িত্বরত এটেনডেন্ট (পরিচালক) মো. গোলাম নবী মোল্লা একজন বিনা টিকেটের যাত্রীর কাছ থেকে টিকিট না দিয়ে ভাড়া আদায় করছিলেন। এসময় ওই ট্রেনে যাত্রারত কয়েকজন ছাত্র গোলাম নবী মোল্লার অনৈতিকভাবে টাকা গ্রহণের বিষয়টির প্রতিবাদ জানান এবং তাকে আটকে রেখে ট্রেনে কর্তব্যরত পরিচালক ও টিটিইকে খবর দেন। তারা ঘটনাস্থলে এলে ছাত্ররা গোলাম নবী মোল্লার তাৎক্ষণিক বরখাস্ত ও পরবর্তী স্টেশনে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। ছাত্ররা তাৎক্ষণিক পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক আহম্মেদ হোসেন মাসুমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন।
ছাত্রদের দাবির মুখে তাৎক্ষণিক মো. গোলাম নবী মোল্লাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ট্রেন রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছালে ছাত্ররা ট্রেন পরিচালক জাকারিয়া সোহাগকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে যান। ছাত্ররা সেসময় ট্রেন পরিচালক জাকারিয়া সোহাগ ও টিটিই গোলাম কিবরিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য বরখাস্তের দাবি জানান। সেসময় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের নিদের্শক্রমে ট্রেনের পরিচালক জাকারিয়া সোহাগ ও টিটিই গোলাম কিবরিয়াকে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় সাময়িক বরখাস্ত করে।
ট্রেন পরিচালক (গার্ড) জাকারিয়া সোহাগ জাগো নিউজকে বলেন, ট্রেনের এটেনডেন্ট মো. গোলাম নবী মোল্লা একজন বিনা টিকেটের যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়াবাবদ ৫০ টাকা আদায় করেন। এটি ট্রেনে যাত্রারত কয়েকজন ছাত্র দেখে তাকে আটক করে আমাকে খবর দেন। আমি তখন গার্ড ব্রেকে অবস্থান করছিলাম। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ছাত্ররা এটেনডেন্ট গোলাম নবী মোল্লাকে আটক করে রেখেছে এবং তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্তের জন্য দাবি জানাচ্ছে। তারা এক পর্যায়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। তার কিছুক্ষণ পরই এটেনডেন্ট গোলাম নবী মোল্লাকে বরখাস্তের নিদের্শনা আসে। এরপর ট্রেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে ছাত্ররা আমাকে রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে যাই। সেখানে মহাব্যবস্থাপক স্যারের অনুপস্থিতিতে চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার (পশ্চিম) সূজিত কুমার বিশ্বাস স্যারের কার্যালয়ে গেলে ছাত্ররা আমাকে ও ট্রেনের টিটিই গোলাম কিবরিয়াকে বরখাস্তের দাবি তোলে। একপর্যায়ে স্যার এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিদের্শনা দেন।
তিনি আরও বলেন, আমি ট্রেনের গার্ড ব্রেকে ছিলাম। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ট্রেনের এটেনডেন্ট গোলাম নবী মোল্লা বিনাটিকেটে যাত্রীর নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রেনের দায়িত্বরত পরিচালক ও টিটিই এ ঘটনা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। সেজন্য পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার সূজিত কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, ছাত্ররা অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের নিদের্শনা দিয়েছি। এরইমধ্যে ট্রেনে দায়িত্বরত পরিচালক, টিটিই ও এটেনডেন্টকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি ঢাকাতে ছিলাম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার সূজিত কুমার বিশ্বাসকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
শেখ মহসীন/এফএ/জেআইএম