মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র দখল করে নাম বদলে দিলেন বিএনপি নেতারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ১২:১৫ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে অবস্থিত ‘বরিশাল জেলা মৎস্য পাইকারি অবতরণ কেন্দ্র’ দখল করে নাম বদলে ‘শহীদ জিয়া মৎস্য পাইকারি অবতরণ কেন্দ্র’ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুরোনো সাইনবোর্ডের সামনে দুদিন আগে নতুন নামের একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ‘বরিশাল জেলা মৎস্য পাইকারি অবতরণ কেন্দ্র’ নাম থাকা এই আড়তের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ জিয়া মৎস্য পাইকারি অবতরণ কেন্দ্র’। তবে এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময় জিয়ার নামেই ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে। এখন আগের নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান নামকরণের উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, গত দেড় যুগ ধরে এর দখল ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি নেতারা আড়ত দখলে নিয়ে নাম বদলে দিয়েছেন।

তবে এ নামকরণের বিষয়ে কিছু জানে না বাজারটির ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এমনকি নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারাও এ বিষয়ে অবগত নন বলে দাবি করেছেন।

পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১০ সালের দিকে এর নিয়ন্ত্রণ নেন মৎস্যজীবী লীগের নেতা খান হাবিব। তিনি ছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী। তিনি তার বাহিনী দিয়ে মোকামের পাশাপাশি রাস্তার ওপর বাজার বসিয়ে চাঁদা তুলতেন। এরপর ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ‘প্রধান খলিফা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০২৩ সালে সাদিক নগরে একক আধিপত্য হারালে মোকাম আবারো খান হাবিবের নিয়ন্ত্রণে যায়। তিনি চলতি অর্থবছরে তার স্ত্রীর নামে এটি ইজারা নেন।

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর খান হাবিব আত্মগোপন করেন। এতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন বিএনপি নেতা মৎস্য আড়তটিতে হানা দেন। ওই ওয়ার্ডেই ব্যবসা কেন্দ্রটি অবস্থিত। ফলে ৭ ও ৮ আগস্ট সেখানে খাজনা আদায় বন্ধ ছিল। এ খবর জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা গিয়ে প্রকৃত ইজারাদারের প্রতিনিধির খাজনা আদায় নিশ্চিত করেন। তবে খান হাবিবসহ তার অনুসারীরা আত্মগোপনে থাকায় মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেন বিএনপিপন্থীরা। এখন তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোকাম।

নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে রয়েছেন মৎস্যজীবী দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক কামাল সিকদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব আনিচুর রহমান মিলন, ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক খান মো. কামাল ও সদর উপজেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জহির সিকদার। এর মধ্যে খান কামাল হলেন খান হাবিবের আপন ভাই।

এ ব্যাপারে খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র দখল না করলেও নাম বদল করেছেন, কিন্তু তা অফিসিয়ালি হয়নি। তাছাড়া এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি পূর্বে চারদলীয় জোট সরকারের সময় জিয়ার নামেই ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করেছিল। এখন আগের নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এ নিয়ে কথা হলে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের নাম শহীদ জিয়ার নামে রাখার বিষয়টি তারা জানেন না। তাদের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি।

আর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, পোর্ট রোড মৎস্য মোকামের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তাদের জানা নেই। সরকারিভাবে নাম পরিবর্তনের কোনো অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।

শাওন খান/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।